কোয়েল দাস পূজা এখন বর্ণ দাস। পিরোজপুর জেলায় প্রথম এ ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শেখমাটিয়া ইউনিয়নের গড়ঘাটা গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের বিকারগ্রস্ত নিখোঁজ বাবা হিরা লাল দাস ও মা বিউটি রানী মিস্ত্রির একমাত্র সন্তান বর্ণ দাস (১৩)। পুত্র বর্ণ দাসকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন জেলা সমাজসেবা অফিসে এবং পরে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আর্থিক সহায়তার জন্য মা বিউটি রানী। সেখানেই কথা হয় তাদের সঙ্গে প্রতিবেদকের। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে (বর্ণ দাস) প্রতিদিন ওষুধ গ্রহণ করতে হয় কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কাছে মা বিউটি রানী প্রায় নির্বাক।
বিউটি রানী যুগান্তরকে জানান, তার স্বামী হিরা লাল দাস স্থানীয় একটি ক্লিনিকের ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ানের চাকরি করতেন। প্রায় আড়াই বছর আগে সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর থেকে সংসারে তীব্র টানাপোড়েন শুরু হয়, সেখান থেকেই কঠিন সংগ্রামের মধ্যে মাকে বৈতরণী এখনো পার করতে হচ্ছে।
বিউটি রানী বলেন, গড়ঘাটা হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন কোয়েল দাস পূজার (বর্ণ দাস) শারীরিক গঠন ও পরিবর্তন একটু একটু করে চোখে পড়তে শুরু করে। এভাবে প্রায় দুই বছর পর সে ১৫ বছরে পূর্ণ যৌবনদীপ্ত যুবক হিসাবে রূপান্তরিত হয়। মাথার চুল কেটে ছেলেদের মতো রাখা হয়। পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ছিল প্যান্ট-শার্ট। তবে তার গলার শব্দটা ছিল খানিকটা চিকন মেয়েদের মতো।
তার মা আরও জানান, বর্ণ দাস যখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল, তখন সে বঙ্গমাতা ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করে ট্রফি অর্জন করেছিল। এ ছাড়া সে ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন খেলায় কৃতী ছাত্রী হিসেবে বিদ্যালয় স্বাক্ষর রাখে। বর্তমানে একই স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে বর্ণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ‘হরমোন ও ট্রান্সজেন্ডার’ বিষয় এ ধরনের পরিবর্তনগুলো সাধারণত ঘটে থাকে।
শেখমাটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান অতিয়ার রহমান চৌধুরি নান্নু বলেন, বর্তমান বর্ণ দাস আর্থিক সহায়তার জন্য আমার পরিষদে সম্প্রতি এসেছিল। তার ব্যাপারে সত্যতা যাচাই-বাছাই করে প্রত্যায়নপত্র দেওয়া হয়েছে এবং তার জন্ম সনদেও ওই সময় (২৬.০১.২০১৬ সালে) কোয়েল দাস পূজা মেয়ে হিসেবে জন্ম সনদ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসক নিলয় গোপ তার লিখিত এক ব্যাবস্থাপত্রে লিখেন, ০৬.০৫.২৪ তারিখে এ হাসপাতালে কোয়েল ভর্তি হয়। তখন সে ‘পার্সিয়াল এন্ড্রোজেন ইনসেনসিটিভ সিনড্রোম’ (৪৬এক্স-ওয়াই ডিএসডি) রোগে ভুগছিলেন। এই মর্মে তাকে শনাক্ত করা হয়।