বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেতে প্রধানমন্ত্রীকে ত্রিশালের নিয়তি রানীর চিঠি
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
খোরশিদুল আলম মজিব, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৬ পিএম
![বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেতে প্রধানমন্ত্রীকে ত্রিশালের নিয়তি রানীর চিঠি](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/07/12/image-827342-1720791999.jpg)
ছবি: যুগান্তর
বীরাঙ্গনার গেজেটে স্বীকৃতির আশায় এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার ও রাজাকারদের লালসার শিকার হওয়া ত্রিশালের নিয়তি রানী (৭১)। বৃহস্পতিবার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে তিনি এ চিঠি পাঠান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে চিঠি হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হেকিম, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার একেএম ফজলুল হক আবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, নুরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, শাহজাহান কবির, আইউব আলী প্রমুখ।
১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রাম থেকে রাশ বিহারী মন্ডলের ১৮ বছরের নিয়তি রানীকে ধরে নিয়ে যায় রাজাকাররা। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের লালসায় তিনি সম্ভ্রম হারান। ২০-২৫ দিন তাকে ক্যাম্পে আটকে রাখার পর মেজর আফসার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা নিয়তি রানীকে বীরাঙ্গনা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দিলেও জীবনের ওই অধ্যায় চাপা রাখতে তাতে সাড়া দেয়নি তার পরিবার।
নিয়তি রানীর বাবা বৃপাচাষী গ্রামের পলী চিকিৎসক ব্রজেন্দ্র চন্দ্র নমদাসের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। ব্রজেন্দ্রের সামান্য আয়ে সংসার চললেও তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চরম অভাব-অনটন দেখা দেয়।
এরপর নিরুপায় হয়ে নিয়তি রানী সরকারি সুবিধা পেতে, ২০১২ ও ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করেন। এরপর ২০১৭ ত্রিশাল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সর্বসম্মতক্রমে ‘ক’ তালিকাভুক্ত হয়ে প্রথম বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পান নিয়তি রানী। জামুকার অনলাইনে প্রকাশিত ৫৮ জনের তালিকার ৩২ নম্বরে ছিলেন তিনি। ওই বছরের মহান বিজয় দিবসে ‘বীরাঙ্গনা’ হিসাবে নিয়তি রানীকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। ২০২১ সালেও পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে সর্বসম্মতক্রমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ‘ক’ তালিকাভুক্ত হন। তবে, ১৩ মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষীর প্রত্যয়ন, ১০ মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যয়ন ছাড়াও স্থানীয় ১০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তির প্রত্যয়নেও বীরাঙ্গনা গেজেটে নিয়তি রানীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। স্বীকৃতির আশায় তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের দরজায় কড়া নাড়লেও মেলেনি স্বীকৃতি।
নিয়তি রানীর স্বামী পরলোক গমন করেছেন ২০১৬ সালে। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত নিয়তি রানী অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। মায়ের ওষুধ আর দুবেলা খাবারের জোগান দিতে নিয়তি রানীর মেয়ে অর্চণা রানী সরকার স্থানীয় মিশু বিদ্যানিকেতন ও শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। লেখাপড়ার ফাঁকে মায়ের চিকিৎসার জন্য আকিজ বিড়ির সেলসম্যানের কাজ করেন ছেলে বুদন চন্দ্র দাস।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হেকিম বলেন, নিয়তি রানী ২০১৭ ও ২০২১ সালের যাচাই-বাছাইয়ে ‘ক’ তালিকাভুক্ত হয়ে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেলেও গেজেট তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটা দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর নিয়তি রানীর দেওয়া চিঠি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।