Logo
Logo
×

সারাদেশ

টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি 

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১১:২০ পিএম

টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি 

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ছয়টি উপজেলার ১১ হাজার পরিবারের ৪৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের সংকট। বন্যার্তরা জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। কুড়িগ্রামের রৌমারি ও রাজিবপুরে বন্যার পানি কমছে। বাড়ছে রোগবালাই। 

রৌমারিতে বন্যার পানিতে ডুবে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। মৌলভাবাজারের বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে অন্তহীন দুর্ভোগে রয়েছেন বানভাসিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

টাঙ্গাইল : জেলার ৪০ হাজার ৬৬ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়াও ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও ধলেশ্বরী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কালিহাতীর দুর্গাপুর গ্রামের ফজলু মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের পাকা সড়কটি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি। জনপ্রতিনিধি বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইনি।

সদর উপজেলার দক্ষিণ খাস মগড়া গ্রামের আজিবর মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দি। আমার মতো অনেকের পুকুরের মাছ চলে গেছে। এছাড়াও পাট ও বিভিন্ন সবজির খেত নিমজ্জিত হয়েছে। আমার গ্রামের কাঁচা সড়কটি উচু করে পাকা করলে অনেকের দুর্ভোগ কমে যেত। 

রাবেয়া বেগম বলেন, ভোটের সময় মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা আসেন। এখন বিপদে আছি, এখন কেউ খোঁজখবর নিতে আসেন না। বন্যার সময় আমাদের খোঁজখবর নিলেও ভালো লাগে। এছাড়াও সাপের আতঙ্কে আছি। 

জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ছয় উপজেলার ১১ হাজার পরিবারের ৪৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি। ভূঞাপুরে ৩০০, গোপালপুর ও কালিহাতীতে ১০০ প্যাকেট করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতি উপজেলায় দুই হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। 

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : রৌমারীতে বন্যার পানিতে ডুবে আকরুমা নামক এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। সোমবার সকালে লাশ পারিবারিক ককবর স্থানে দাফন করা হয়। মারা যাওয়া আকরুমা খাতুন উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুনবন্দর হাজীপাড়া গ্রামের আনছার আলীর মেয়ে। 

এদিকে রৌমারী ও রাজিবপুরে সার্বিক বন্যা কমতে শুরু করেছে বাড়ছে রোগবালাই। বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে ৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। গতকাল সকালে জিনজিরাম-নদীতে বন্যার পানি কমছে। বন্যা কবলিত এলাকার ১৭৮টি প্রাথমিক ও ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

এতে রৌমারী, রাজীবপুরের ৯টি ইউনিয়নের ৫৬টি মৌজা দুই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫৬টি মৌজার ৩০০টি গ্রামের মধ্যে ৭৫টি গ্রামের প্রায় ৯০ হাজার চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চরঞ্চলের প্রত্যেকটি বাড়িতে কোমর থেকে বুকপানি। উপজেলায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে যাদুরচর। রাজিবপুরে ২টি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত, ১৫টি স্থানে ভেঙে এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব স্থানে ডিঙি নৌকায় চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। বন্যায় প্রায় ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হলেও প্রশাসনের পক্ষে নাম মাত্র কিছু ত্রাণ বিতরণ করেছে। 

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : বড়লেখা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ প্রায় ১ মাস ধরে অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। চারদিকে বন্যার পানি। ঢেউয়ে ঘরের চারপাশের মাটি সরে গেছে। কোনোমতে ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। ঘরটি হাকালুকি হাওড় পারের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের আপ্তাব উদ্দিনের। ঘরে পানি ওঠায় ২০ দিন আগে ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন। বন্যার পানি না কমায় আপ্তাবের ঘরে ফেরা অনিশ্চিত। এমন সমস্যায় পড়েছেন ৩৩ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ৫ শতাধিক পরিবার। এরা ছাড়াও বন্যাদুর্গত হাজার হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। 

আলাপকালে আপ্তাব উদ্দিন বলেন, ১৭ জুন ঘরে পানি উঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। আগে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন দিনে নৌকা চালান আর রাতে সুযোগ পেলে মাছ ধরে কোনোমতে জীবিকা চালাচ্ছেন। অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। তিনি বলেন, বন্যায় তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ঘরের অবস্থা ভালো নয়। চারপাশের মাটি সরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। খুব ভোগান্তির মধ্যে আছেন। 

বড়লেখা ইউএনও নাজরাতুন নাঈম বলেন, প্রায় ১ মাস ধরে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম