ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাশ, এবার এইচএসসিও দিচ্ছেন বাবা
বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ছেলের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ সেই বাবা ইমামুল ইসলাম এবার এইচএসসি পরীক্ষাও দিচ্ছেন।
জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে তিনি চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তবে ছেলে আবু রায়হান এসএসসি পাশের পর গত বছর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের বাড়ি উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামে।
মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষে কথা হয় বাবা ইমামুলের সঙ্গে।
তিনি জানান, ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংসারের অভাব-অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণি পাশের পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ২৪ বছর আগে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় ১৮ বছর গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৬ সালে সেই কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে জমানো টাকা দিয়ে গ্রামে এসে আমের ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট মুদির দোকান দেন। কিন্তু বুকের ভেতরে লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝে মধ্যেই তাকে পীড়া দিত। লোকলজ্জায় পড়া লেখা হয়ে উঠছিল না।
ইমামুল আরও জানান, সমাজে আর দশটা মানুষের মতো নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই পারিবারিক সিদ্ধান্তে অবশেষে ২০২০ সালে ছেলের সঙ্গে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। পরে কারিগরি শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি জিপিএ ৪.৭৯ পান। আর ছেলে আবু রায়হান পেয়েছিলেন জিপিএ ৪.৮২।
বাবা-ছেলের উত্তীর্ণের পর তৎকালীন ইউএনও-ডিসি তাদের সংবর্ধনা দেন। সেই সময় লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন বাবা ইমামুল। এ নিয়ে যুগান্তরে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এবার সেই কথা রেখে তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি বিএমটি শাখার মানব উন্নয়ন ট্রেড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোসা. শামসুন্নাহার বলেন, ইমামুলের এই আগ্রহে বিনা ফিতে তাকে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তার এই আগ্রহকে তিনি সাধুবাদ জানান।