আ.লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মারধরের অভিযোগ
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:৫২ এএম
ফাইল ছবি
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার দুই দিন পার হয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে। এদিকে মারধরের ঘটনায় কোনো প্রতিকার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মারধরের শিকার হওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের সদস্যরা হলেন, আলহাজ উদ্দিন (৩০), রানু সরকার (২২), সদরুন্নবী (৩৫) ও আব্দুর রাজ্জাক (৪৫)।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের রুহিয়ারপাড় এলাকায় শুক্রবার দুপুরে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর জোনাল অফিসের পক্ষে বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী একটি দল যান।
তারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রাজার বাড়িতে গিয়ে তার শিল্প সংযোগের চলতি বছরের মে মাসের বকেয়া বিল পরিশোধ রয়েছে কি না, তা জানতে চান।
এ সময় রাজা বাড়ির ভিতর থেকে হুমকি দিয়ে বলেন ‘বিলটি পরিশোধ থাকলে তোদের সকলের খবর করে ছাড়বো’। এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলকে রাইচ মিলের বিল পরিশোধের কপি দেখানো হলে তারা সেখান থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মোহাম্মদের মোড় বাজার এলাকায় চলে যান।
পরে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজা সাঙ্গ-পাঙ্গকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের সদস্যদের কাছে জানতে চান কে কে আমার বাড়িয়ে গিয়েছিল। এ কথা বলার পর লোহার রড দিয়ে ওই দলের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।
এ সময় রাজার সাঙ্গ-পাঙ্গরা সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের সদস্যদের বেধড়ক মারপিট করে তাদের সঙ্গে থাকা হটস্টিক (জরুরি বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম) কেড়ে নেন। পরে তারা জীবন রক্ষার্থে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। নির্যাতনের ঘটনায় আহত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের সদস্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
হামলার শিকার হওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের সদস্যরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে এসে আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করি। এরপর বিষয়টি উলিপুর জোনাল অফিসে কর্মকর্তাদের অবগত করি। তখন অফিস থেকে এজিএম রেজাউল করিম রাজার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধাপ্রদান, নিয়োজিত কর্মচারীকে দায়িত্বরত অবস্থায় মারপিট এবং রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় লিখিতি অভিযোগ করেন।
এদিকে ঘটনার দুইদিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
তারা আরও বলেন, সরকারি কাজ করতে গিয়ে এ ভাবে মারধরের শিকার হয়ে প্রতিকার না পেলে আমাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে তবকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রাজা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের হটস্টিক কেড়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তাদের মারধরের কথা অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, আমি বিল পরিশোধ করেছি। তারপরেও তারা আমার লাইন কেটে দেওয়ার জন্য উদ্ধত হলে আমি তাদেরকে বিরত রাখি। এর বেশি কিছু ঘটেনি, তারা বানিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনালের ম্যানেজার সোহানুর রহমান জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের ওপর হামলার ঘটনায় সমিতির পক্ষ থেকে এজিএম চিরেন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। এখন পর্যন্ত আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে শনিবার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উদ্ধার করে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মামলা করতে চাইলে নেওয়া হবে।