ছবি : সংগৃহীত
বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে চার ফাঁসির আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্য ডেপুটি জেলারসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
এছাড়া জেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামিদের রাজশাহীসহ দেশের অন্য জেলে স্থানান্তর চলছে।
জেলা প্রশাসক ও কারা অধিদপ্তরের গঠিত পৃথক কমিটি শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে তদন্ত শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
সাময়িক বরখাস্তরা হলেন, ডেপুটি জেলার মো. হোসেনুজ্জামান, সর্ব প্রধান কারারক্ষী ফরিদ উদ্দিন, দুই প্রধান কারারক্ষী দুলাল মিয়া ও আবদুল মতিন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম।
এছাড়া বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে, প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইদুর রহমান এবং কারারক্ষী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।
এদিকে স্মরণকালের মধ্যে চার ফাঁসির আসামি কনডেম সেল ফুটো করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় কারাগারের দুর্বল অবকাঠামো ও কর্তাদের অবহেলার বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে।
১৮৮৩ সালে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় চুন ও সুরকির গাঁথুনি দিয়ে জেলা কারাগার নির্মাণ করা হয়। জেলখানার আশপাশে অনেক সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হলেও কেউ বাধা দেয়নি।
গত বছরের ১৯ অক্টোবর বগুড়া কারাগার চত্বরে একরামুল হক নামে এক রক্ষীর লাশ উদ্ধার, জেলে উচ্চবিত্ত হাজতি/কয়েদিদের অসুস্থতার অজুহাতে জেল হাসপাতালে রাখা, বাইরের খাবার ও মাদক সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে।
২৫ জুন রাত ৩.৫৫ মিনিটে বগুড়া কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে ফাঁসির চার আসামির পলায়নের বিষয়টি ব্যাপক তোলপাড় শুরু করে। তারা সেলের বাথরুমের বাতলির লোহার হাতল দিয়ে এক মাসের চেষ্টায় ছাদ ছিদ্র করতে সক্ষম হয়। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ কেউ টের না পাওয়ায় নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও রাত ৪.০৫ মিনিটে শহরের চেলোপাড়ার চাষীবাজার এলাকার জনগণ তাদের আটক করে পুলিশে দেন।
এরা হলেন, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিল খাঁর ছেলে আমির হামলা ওরফে আমির হোসেন (৩৮), বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়ার ইসমাইল শেখ চাঁদ মিয়ার ছেলে ফরিদ শেখ (২৮) এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট পুর্বপাড়ার বাসিন্দা ও বিএনপি সমর্থিত কাহালু পৌর মেয়র আবদুল মান্নান ওরফে ভাটা মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩১)।
ফাঁসির আসামি পালিয়ে যাওয়ায় কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তাই এ জেলে থাকা মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামি এবং জেএমবির জঙ্গিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাঈম মন্ডল, শিবলু ফকির ও আবদুর রাজ্জাক এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহিমকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দুটি কনডেম সেলের মধ্যে জাফলং-এ চারটি ও আত্রাইয়ে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এ নয়টি কক্ষে ১০ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। জাফলং সেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রেফতার চারজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে অন্য সেলে রাখা হয়েছে। তারাসহ অন্যদের ব্যাপক নজরদারি চলছে। জেলের ভিতরে ও বাহিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক সুজন মিয়া জানান, তিনি কারাগারের ভেতরে ও বাইরে তদন্ত করছেন। প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করেছেন।