যুবককে লিবিয়ায় জিম্মি, ২০ লাখ টাকা দাবি অপহরণকারীদের
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম
রাজশাহীর ওয়াসিম আলী (৩২) নামে এক যুবককে লিবিয়ায় অপহরণ করে পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। ওয়াসিম রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সায়বাড় গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে।
ছেলেকে ফেরত চেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করেন ওয়াসিমের মা।
ওয়াসিমের মা পেমালা বেগম সংবাদ সম্মেলনে তার ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের জন্য সরকারের পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসিম আলীর মামা জলিলসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
ছেলেকে উদ্ধারের জন্য ওয়াসিমের মা জমি বিক্রি করে দালালদের ইতোমধ্যে ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও অপহরণকারীরা তার ছেলেকে মুক্তি দেয়নি। উপায়ন্তুর না দেখে গত ২৬ জুন রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজের অধীন লিগ্যাল সেলে একটি লিখিত অভিযোগ দেন আইনি সহায়তার জন্য।
পেমালা বেগম বলেন, গ্রামের মিলন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে এক বছর আগে ওয়াসিমকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। লিবিয়াতে গিয়ে ওয়াসিমকে একটি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ দেওয়া হয়। সেখানে তিন মাস কাজ করার পর ওয়াসিমের চাচাতো ভাই ইসমাইল হোসেন তাকে জানায়, তারা ওয়াসিমকে লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাঠাবে। সেখানে ভালো কাজ ও টাকা আছে। ইসমাইল অনেক দিন ধরেই লিবিয়ায় আছে।
ইতালির পথে রওনা হওয়ার আগে ওয়াসিম তার মাকে ফোন করে জানিয়েছিল, তারা ইতালির পথে যাবে একদিন পর। এরপর ১৫ দিন আর কোনো যোগাযোগ ছিল না মায়ের সঙ্গে।
এদিকে ইতালি রওনা হওয়ার বেশ কয়েক দিন পর ওয়াসিম তার মায়ের কাছে ভিডিওকলে ফোন করেন। ওয়াসিম তার মাকে বলেন, অপহরণকারীরা তাকে জিম্মি করে রেখেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওয়াসিম বলেন, মা তোমরা আমাকে বাঁচাও। এখানে প্রতিদিন আমাকে নির্যাতন করা হয়। এরা আমাকে মেরে ফেলবে।
পেমালা বেগম জানান, প্রায় ছয় মাস হলো আমার ছেলেকে অপহরণের পর জিম্মি করে রাখা হয়েছে লিবিয়ায়। অপহরণ চক্রের সঙ্গে ইসমাইল জড়িত রয়েছে। চক্রের সদস্যদের ইতোমধ্যে দুই দফায় ৮ লাখ পরিশোধ করেছি। কিন্তু ২০ লাখ টাকা না পেলে আমার ছেলেকে মুক্তি দেবে না বলে জানিয়েছে অপহরণকারীরা।
ছেলেকে মুক্ত করতে ইসমাইলের বাবা-মায়ের হাত-পা ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছি কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
জিম্মি ওয়াসিমের মামা আব্দুল জলিল বলেন, অপহরণকারী দলের সঙ্গে ওয়াসিমের চাচাতো ভাই ইসমাইল হোসেন জড়িত আছে বলে আমরা মনে করছি।
ওয়াসিমকে মুক্ত করতে আমরা দুবারে তার পরিবারের কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আরও টাকা দাবি করছে অপহরণকারীরা। এ কারণে ওয়াসিমকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।
ওয়াসিমের মা অভিযোগ করে বলেন, ছেলেকে উদ্ধারে আমরা দুর্গাপুর থানায় কয়েকবার গেছি, কিন্তু পুলিশ বলেছেন দেশের বাইরের ঘটনা। এসব কারণ দেখিয়ে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ইসমাইল হোসেনের পরিবারকে চাপ দিলেই ওয়াসিমকে লিবিয়া থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওয়াসিমের মা ও মামার দাবি ইসমাইলের পরিবারকে যদি পুলিশ চাপ দেন তাহলে ওয়াসিম মুক্তি পাবে বলে তাদের বিশ্বাস।
জানতে চাইলে রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, ওয়াসিমকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ায়। এ কারণে থানায় অভিযোগ নেওয়া যায়নি। ওয়াসিমকে মুক্ত করতে পররাষ্ট্র অথবা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিতে পারে।