সুনামগঞ্জে পানিবন্দি ৮ লাখ মানুষ, ত্রাণের জন্য আকুতি
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম
টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারত সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দিরাই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে দিরাই পয়েন্টে।
তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বুধবার রাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি উজানে কিছুটা কমেছে; কিন্তু ভাটির দিকের নদীগুলোর পানি বেড়েছে। পানি হাওর উপচে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে ১১টি উপজেলায় ৮৮ ইউনিয়নের পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছেন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন ১৯ হাজার মানুষ।
এদিকে ছাতক গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার ছাতক সড়ক, জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা সড়ক ডুবে জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, জেলার চারটি পৌরসভা এলাকাসহ ৭৮ ইউনিয়নের ১০১৮ গ্রামের ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৭ জন মানুষ বন্যার ভোগান্তিতে আছেন। ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বন্যার পানি উঠেছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাহিরপুরে ১০-১৫টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল ৯টায় দিরাই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমেছে সুনামগঞ্জের পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে। সুরমা নদীর এই পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৫৫, লাউড়ের গড়ে ৬২, ছাতকে ৬৫ এবং দিরাইয়ে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জে ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত গেল ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যার্তদের জন্য জেলায় মোট ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দসহ বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে।