কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৪, ০৮:১৩ পিএম
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় গত দুই দিনের ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপন, কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বুধবার বেলা ১টার দিকে ওই নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে নেত্রকোনাসহ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। গত ৪৮ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৫২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ওই সময় অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া ওই উপজেলার মহাদেও নদ, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি এসেছে।
কৈলাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, আমার ইউনিয়নের বেনুয়া, চানকোনা, খলা, সাকুয়া, ঈন্দ্রপুর, বিষমপুর, চারিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। কয়েকটি বাড়ির উঠানে ও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে যাবে।
পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনিয়নের কালাইকোনা, জীবনপুর, গুয়াতলা, কৈলাটি, মঙ্গলসিধসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে।
কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় কতগুলো বিদ্যালয়ে বন্যার পানি এসেছে, তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে ডুবিয়ারকোনা, বাহাদুরকান্দা, খলা, বিশরপাশাসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের বিশরপাশা এলাকায় সাতটি পরিবারের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় বেলা ১১টার দিকে তাদের বিশরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। সঙ্গে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকেও নিরাপদে রাখা হয়েছে। জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা আছে।
পাউবোর নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরপূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে করে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।