গাজীপুরে দুইশ মিটারের ব্যবধানে কুরবানির পশুর দুই হাট, উত্তেজনা
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পূবাইল বাজার পশুর হাট দীর্ঘদিনের ঐহিত্যমন্ডিত একটি হাট। এখানে স্থানীয় কৃষক ও খামারিদের গরু-ছাগল ন্যায্যমূল্যে বেচাকেনা হয়ে আসছে। ক্রেতারা কম হাসিলে পছন্দের পশু কিনে হাসিমুখে ঘরে ফিরেন প্রতি বছর।
এবার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এই হাটের দুইশ মিটার দূরত্বে আরও একটি পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ক্রেতাদের ঠকানোর উদ্দেশে এবং পূবাইল পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীলদের বিতর্তিক করতে কৌশলে আরও একটি হাটের অনুমোদন এনেছে গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন সীমানার জিরো পয়েন্টের পূবাইল বাজার জামে মসজিদ ও পূবাইল বাজার আহলে হাদিস জামে মসজিদের নামে। এর ফলে দুই হাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীলদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে ছোট কয়ের বাড়িয়া ৮-১০ ফুট রাস্তায় যাত্রী ও অটো চলাচলে বেড়েছে যানজট ও দুর্ভোগ।
নতুন হাটের অনুমোদনপত্রে দেখা গেছে একই দিনে উপজেলা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হাটটির অনুমোদন দিয়েছে। ১০ জুন সোমবার অনুমোদন হয়েছে ও গত মঙ্গলবার থেকে হাট বসিয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উত্তর পূর্ব সীমানার ছোট্ট বালু নদীর ওপারে ছোট কয়ের ব্রিজের ঢালে গাজীপুর সিটি ও জেলার জিরো পয়েন্টে অর্থাৎ পূবাইল বাজার কুরবানির পশুর হাটের ২০০ মিটার দূরত্বে এই নতুন হাটের অবস্থান। পূবাইল বাজার হাটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত মঙ্গলবার ও আগামীকাল শনিবার নতুন বিতর্কিত হাটটি বসছে। এর ফলে দুই হাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছে তাদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ওসি ইব্রাহিম খলিল জানান, পূবাইল বাজার জামে মসজিদ ও পূবাইল বাজার আহলে হাদিস জামে মসজিদ হাটের অনুমোদনের কপি সোমবার পর্যন্ত পাইনি। পরে বাড়িয়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ আশরাফুল ইসলান যুগান্তরকে জানান, ১১ জুন হাট বসেছে। আর ১০ তারিখ রাতে অনুমোদনের কপি পেয়েছি।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক যুগান্তরকে জানান, নতুন হাটের অনুমোদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এটা সদর অ্যাসিল্যান্ড তদন্ত করে রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতেহ সফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথমে বলেন, জেনে জানাব। পরে তিনি জানান, এটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেখে পাঠানোর পর আমি অনুমোদন দিয়েছি। এই এলাকা সিটি করপোরেশনে পড়েনি।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- একদিনে একটি পশুর হাট এতটুকু দূরত্বে কীভাবে অনুমোদন পেল? কোন নিয়ম নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এতে? হাট বসানোর মাধ্যমে দুদল গ্রামবাসীর মধ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোই মূল উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্ন সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত তদন্ত করে দেখা উচিত বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, ২০০ মিটার দূরত্বের ব্যবধান হলেও যুক্তি দাড় করিয়েছে নতুন হাটটি পড়েছে গাজীপুর জেলার অংশে আর পুরনোটি গাজীপুর সিটি করপোরেশন অংশে। কিন্ত নতুন হাটের ইজারা এনেছে আবার গাজীপুর সিটিতে অবস্থিত পূবাইল বাজার জামে মসজিদ ও পূবাইল বাজার আহলে হাদিস জামে মসজিদের নামে। জেলা প্রশাসকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পূবাইল বাজার হাটের ইজারাদারেরাই এবার পূবাইল বাজার কুরবানির পশুর হাটের ইজারা না পেয়ে পূবাইল বাজারের দুটি মসজিদের নাম ব্যবহার করে গাজীপুর জেলা ও সিটির সীমানার জিরো পয়েন্টে নতুন হাট কৌশলে অনুমোদন নিয়েছে।
সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে হাটের ইজারা এনে পূবাইল ও পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রাম বড় কয়ের ও ছোট কয়ের সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরাজ পড়েছে টানটান উত্তেজনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত হচ্ছে এই দুটি কুরবানির হাট।
স্থানীয়দের আশঙ্কা দুপক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রীতিকর ঘটনা।
বাড়ীয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার ছোট কয়ের গ্রামের মাসুম মোল্লা জানান, আমাদের ক্ষমতায় আমরা হাট এনেছি। মসজিদের নামে হাট আনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সওয়াবের আশায় এনেছি।
পূবাইল বাজার হাটের ইজারাদার হুমায়ুন কবির জানান, পূবাইল মেট্রোপলিটন থানা এলাকার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র কুরবানির পশুর হাট পূবাইল বাজার। এবার মসজিদের নাম ব্যবহার করে এপারে ইজারা না পেয়ে ওপারে নতুন করে হাট বসিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে স্বার্থান্বেষী মহল। ক্রেতারা আমাদের হাটেই আসছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন মোল্লা জানান, পূবাইল বাজার ও পার্শ্ববর্তী দুটি এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশনের পূবাইল ও কয়েরের জিরো পয়েন্টে হাট বসিয়ে ঈদের আনন্দকে নষ্ট করার পায়তারা করছে একটি মহল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।