যবিপ্রবি ছাত্রলীগ
লাগামহীন চলছে শিক্ষার্থী নির্যাতন, রক্ষা পাচ্ছে না সাংবাদিকরাও
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ১০:০৬ পিএম
ফাইল ছবি
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ ছাত্রলীগের কার্যক্রম। ছাত্রলীগের নির্যাতনে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক, চাকরিপ্রার্থীর কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। গত দেড় বছরে অন্তত ১০টি সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনায় সরাসরি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কখনো কখনো ব্যবস্থা নিলেও লাগাম টানতে পারেনি। এতে শৃঙ্খলা ফেরেনি ছাত্রলীগের কার্যক্রমে। ক্যাম্পাসে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগ। কিছু নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে সংগঠনের।
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই ট্যাগ দেওয়া হয় ছাত্রলীগকে। একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে প্রভাবিত করে মামলাও দায়ের করে। কিন্তু তদন্তে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। সর্বশেষ যে ঘটনায় ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে, সেটি মূলত খেলার মাঠে ব্যক্তিগত কারণে মারামারি হয়েছে।
চলতি বছরের ৪ জুন মঙ্গলবার গভীর রাতে যবিপ্রবির আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরীন রহমান প্রলয়কে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হলে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার (৩০৬ নম্বর) কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। সভাপতির উপস্থিতিতে রাতভর নির্যাতনের পর ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ আটজনের নামে মামলা করা হয়। এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি হলের ভিতরে ছাত্রলীগের সভাপতিকে সালাম না দেওয়ার অপরাধে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় একজনকে বহিষ্কার করে যবিপ্রবি প্রশাসন। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে লিফট অপারেটর পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে ১১ জন ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন।
এক ভুক্তভোগীর মামলায় গত ৯৯তম রিজেন্ট বোর্ডে অভিযুক্ত ছয়জনকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি। এরপর বোর্ডের প্রভাবশালী সদস্য স্থানীয় সংসদ-সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ অভ্যন্তরীণ অধিকতর তদন্ত করার পরামর্শ দেন। সেই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে। সেটিও এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মশিয়ূর রহমান হলের একটি কক্ষ থেকে ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন নামের ওই শিক্ষার্থীকে সহপাঠীরা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযুক্তদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সলের অনুসারীদের মধ্যে মারামারিতে পাঁচজন আহত হন।
মারামারির ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয় ও শহিদ মশিয়ূর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহমেদকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি স্থগিত করা হয়। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। একই বছরের ১৭ অক্টোবর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য শিহাব উদ্দিন সরকারকে মারধর করে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষকেরা লাগাম টানতে পারব না। সেটা সম্ভবও নয়। কারণ, এটা রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে-এটা রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে।