Logo
Logo
×

সারাদেশ

উপকূলে রিমালের আঘাত: ঘরছাড়া হাজারো মানুষ খাবার ও পানি সংকটে 

Icon

নূর ইসলাম রকি, খুলনা

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম

উপকূলে রিমালের আঘাত: ঘরছাড়া হাজারো মানুষ খাবার ও পানি সংকটে 

ছবি-যুগান্তর

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবের বোঝা এখনো বইতে হচ্ছে উপকূলবাসীকে। খুলনার পাইকগাছা, কয়রা এবং দাকোপে এখনো বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গড়িমসির কারণে বেড়িবাঁধ সংস্কারে বিলম্ব হচ্ছে-অভিযোগ এলাকাবাসীর। ফলে মানবেতর দিন কাটছে উপকূলবাসীর। এসব এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। খাবার, ওষুধ ও পানির সংকট এবং স্যানিটেশন সমস্যা দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। উপকূলবাসীর দাবি, শুধু সংস্কার নয় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।

শুক্রবার পর্যন্ত পাইকগাছার ২২নং পোল্ডার এবং কয়রার দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সংস্কার সম্পন্ন হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড খুব দ্রুত এগুলো সংস্কার করবে বলে জানিয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার বিকালে কয়রায় মানববন্ধন করেছেন। এদিকে উপকূলবাসীর অভিযোগ ২৬ মে রাতে দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দুই-তিন দিনের মধ্যে কেউ খোঁজ নিতে আসেননি। উপকূলবাসী স্বেচ্ছায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও জোয়ারের পানিতে সেটা ধসে যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সংস্কার শুরু হয়েছে। 

সরেজমিন পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসহযোগিতার কারণেই বিপাকে পড়েছে উপকূলবাসী। খুলনার চারটি উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাড়িঘরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে গেছে। লন্ডভন্ড করে দিয়েছে বাড়িঘর, নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি, মাছের ঘেরসহ গবাদিপশু। ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় প্রবল জোয়ারে ভদ্রা নদীর পানি উপচে ২২নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এলাকাবাসী জানায়, এই পোল্ডারটি আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পোল্ডারটি সংস্কারের জন্য টেন্ডারও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রিমালের আগে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। শুক্রবার সকালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান এই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সুমন্ত কুমার রায়, বিশ্বজিৎ রায়, মৃণালন্দ বিশ্বাস, রাবেয়া বেগম, আছিয়া বেগমসহ এই এলাকার একাধিক মানুষ অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অসহযোগিতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পোল্ডারটি সংস্কার করা হয়নি। যার কারণে আজ হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এই ক্ষতি আগামী ৫০ বছরেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে না। নোনা পানি প্রবেশ করায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনো বাড়িগুলোতে পানি রয়েছে। খাবার পানিতে সমস্যা হচ্ছে। চিঁড়া-মুড়ি বা কেউ দিলে সেটা খাচ্ছি। অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছেন। প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হয়নি। 

এদিকে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালী গ্রামের তিনটি পয়েন্ট থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে রিমালের পানি প্রবেশ করেছে। কপোতাক্ষ নদী থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি উপচে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। তিনটি পয়েন্ট সংস্কার করা হলেও দুটি পয়েন্ট জোয়ারের পানিতে ভেঙে যায়। গ্রামটিতে অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩০০ মানুষ। তবে গ্রামটির প্রায় এক হাজার বিঘার মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোনা পানি প্রবেশ করায় বাড়িঘর নষ্ট হচ্ছে। ফসলের জমিতেও ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা ভেঙে গেছে। তারা অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকমতো বেড়িবাঁধগুলো করে না। যার কারণেই বড় কোনো ঝড় এলেই বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, এই এলাকা লবণপানিমুক্ত ছিল। কিন্তু এই ১২টি গ্রামে লবণপানি ঢুকে গেছে। বিশেষ করে ২২নং পোল্ডারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ এসেছে। খুব দ্রুতই সেটা দেওয়া হবে। 

পাইকগাছায় বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে পানিসম্পদ সচিব: পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করা হবে। চেষ্টা করা হবে সেটা যেন বর্ষার আগেই করা যায়। এরপর সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে আরও টেকসই করা হবে। তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধের ১৩৯টি পোল্ডার রয়েছে। পোল্ডারগুলো ষাটের দশকে তৈরি হওয়ায় বর্তমানে খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ফলে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১০টি পোল্ডার মজবুত করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরও ২০টি পোল্ডার মজবুতে কাজ করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাকি পোল্ডারগুলো শক্তিশালী করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করা হবে। শুক্রবার দুপুরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের তেলিখালীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সচিবের সঙ্গে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ সাহা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবিবুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, দেলুটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম