এভারেস্টজয়ী বাবর আলীকে নিয়ে স্বজন-গ্রামবাসীর উচ্ছ্বাস
হাটহাজারী (হাটহাজারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টজয়ী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের হালদা পারের লেয়াকত আলী ও লুৎফুল নাহার বেগমের মেজো সন্তান ডা. মো. বাবর আলী। তিনি চট্টগ্রামের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন। মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে দেশে তার গ্রামের বাড়িতে এসেছেন।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় বিমান এয়ারলাইন্সের বিজি ৩৭২ ফ্লাইটে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান বাবর আলী।
এ সময় ফুলের তোড়া, হলুদ গাঁদার মালায় ঢেকে দিলেন বাবরকে। কাঁধে তুলে শূন্যে ছুড়ে উল্লাস করলেন তার স্বজন ও বন্ধুরা।
ওই সময় এভারেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বাবর বলেন, আত্মবিশ্বাস ছিল এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়ায় পৌঁছার পর আবার দেশে ফিরে আসব। সেটিই হলো। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ, প্রচেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা সবই পূরণ হলো। দেশের মানুষ যেভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে, এতে আমি আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত ও অভিভূত।
এরপর বিমানবন্দর থেকে নিজ বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের নজুমিয়াহাট এলাকার বাদশা মিয়া সিপাহীর বাড়িতে পৌঁছান। এ সময় বিমানবন্দর থেকে শুরু করে নিজ গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত বাবর আলীকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ ছিলেন হাজারও মানুষ। রাত ১১টার দিকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে বাবর আলীর গর্ভধারিণী মা লুৎফুল নাহার বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি গর্বিত। আমার মায়ের সন্তান হিসেবে আমি যেমন গর্ববোধ করছি, তেমনি এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেও গর্ববোধ করছি।
গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে বাবর আলী আরও বলেন, আমার আত্মবিশ্বাস ছিল এভারেস্ট ও লোৎসে পর্বত জয় করে সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পারব। শেষ পর্যন্ত আমি পেরেছি। আমার মায়ের দোয়া ছিল সব সময়ই আমার সঙ্গে। সমগ্র দেশবাসী আমাকে শুভকামনা জানিয়েছে। দোয়া করেছে।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় বাবরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দুশ্চিন্তায় থাকলেও বাবরের মা-বাবা প্রায় ২ মাস পর ছেলেকে কাছে পেয়ে দারুণ আনন্দিত। ছেলের এমন প্রাপ্তিতে তাদের চোখ ছলছল করছিল। বাবররা তিন ভাই-বোন। তারা সবাই অত্যন্ত খুশি। ভাইকে বরণ করতে বাবার বাড়িতে এসেছেন ছোটবোন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম হামীমুন তানজিন।
মেজো ভাই এভারেস্ট জয় করে বাড়ি ফিরেছেন, তাই মহাখুশি হামীমুন তানজিন। তিনি বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে মেজো ভাই ডাক্তার হয়েছিলেন; কিন্তু তার শখ ও স্বপ্ন ছিল পাহাড়-পর্বত জয় করা। অবশেষে আল্লাহ ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। যদিও বাবর আলীর বড় ভাই ব্যারিস্টার মামুন আলী সপরিবারে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। সবার ছোট ভাই বিকাশের এক্সিকিউটিভ অফিসার আবীর আলী ছুটি পাননি বলে তার কর্মস্থল সিলেটের হবিগঞ্জে আছেন।
পরিবার তথা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চিকিৎসক হয়ে ছোটবেলা থেকে পাহাড়-পর্বত জয়ের নেশায় বিভোর ছিল আমার বাবর- এমনটা দাবি করে মা লুৎফুল নাহার বেগম বলেন, বাবর ছোটবেলা থেকেই চঞ্চল। তবে মেধাবী ছিল। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করত। দেশবাসীর দোয়ায় সে এভারেস্ট জয় করে দেশে ফিরেছে। তাই খুব ভালো লাগছে।
বাবর আলীর এভারেস্ট অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ডা. বাবর আলীর এভারেস্ট জয়ে দেশবাসী এবং স্বজনদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, তা এক কথায় অতুলনীয়, অভাবনীয়। মূলত বাবরের শুভাকাঙ্ক্ষীদের আবদার রক্ষা করতে গিয়ে আমরা ৩ জুনের পরিবর্তে ২৮ মে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ডা. বাবর আলী ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন। ঠিক একদিন পরেই ২১ মে তিনি বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম স্থান লোৎসে পর্বতের শিখরে আরোহণ করে রেকর্ড গড়েন।
৩৩ বছর বয়সি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এমবিবিএস পাশ করা ডা. মো. বাবর আলী পেশা হিসেবে ডাক্তারিতে থিতু হননি। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন তিনি। সাইক্লিংয়েও রয়েছে তার আলাদা আগ্রহ এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিজেকে জড়িয়ে বেশ প্রশংসিত হন।