Logo
Logo
×

সারাদেশ

সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা, পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১২:৪৯ এএম

সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা, পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলন

ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ওরফে ডন সেলিমের বাড়িতে দফায় দফায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল সাওঘাট এলাকায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মোটরসাইকেলযোগে অর্ধশত সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় এই হামলা চালায়।

এ ঘটনার পর পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলন করেছে সেলিম প্রধান ও ব্যবসায়ীরা।

সেলিম প্রধান ও তার স্ত্রী রাশিয়ান নাগরিক আনা প্রধান শুক্রবার গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটিয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সরেজমিনে সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলায় ব্যবহৃত লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, ভাঙা কাচ ও গুলির খোসা পড়ে থাকতে দেখতে পান গণমাধ্যম কর্মীরা।

এদিকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে প্রথম দফায় হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই দুপুরে সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন প্রায় ১৬ বিঘা আয়তনের বিশাল কাঁচা বাজারের আড়তের ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে একটি  সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আড়তের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ওই আড়তটি ১০ বছরের চুক্তিতে ভাড়া দিলেও সেলিম প্রধান সেটি দখল করতে চাইছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মূলত সদ্য সমাপ্ত রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের ও জয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে নামার কারণেই এই হামলার মূল কারণ। পাশাপাশি সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন বিশাল কাঁচাবাজারের আড়তের দখল নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিরোধ চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দফায় দফায় হামলার সময় তারা বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন, তবে গুলিবর্ষণ হয়েছে কিনা তারা জানেন না।

এদিকে প্রথম দফায় হামলার পর দুপুর ১টার দিকে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে সেলিম প্রধান দাবি করেন, সকাল ৯টার দিকে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকায় তার বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একদল মুখোশ পরিহিত লোক দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

কাচা বাজারের আড়তের বিষয়ে সেলিম প্রধান দাবি করেন, জেলে থাকা অবস্থায় এক স্বজনের মাধ্যমে মজিবুর রহমান জাল স্বাক্ষর ব্যবহার তার (সেলিম) মালিকানাধীন ১৬ বিঘা জমি ভাড়া নেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তার জমি ফেরত চান। চুক্তি অনুযায়ী সাত মাস আগে জমি ফিরে পেতে ভাড়াটেদের তিনি আইনি নোটিশ পাঠান এবং থানায় অভিযোগ করেন।

এদিকে সেলিম প্রধানের সংবাদ সম্মেলনের আগেই দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করেন ওই আড়তের ব্যবসায়ীরা। সেখানে ব্যবসায়ীদের পক্ষে আড়তদার মজিবুর রহমান দাবি করেন, ২০১৯ সালে ১০ বছর চুক্তিতে সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন ১৬ বিঘা জমি ভাড়া নেন তিনি। পরে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সদ্য বিজয়ী চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান এবং রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মীর আবদুল আলীম যৌথভাবে সেখানে বালু ভরাট করে প্রায় সাড়ে ৩০০ দোকানের একটি আড়ত গড়ে তোলেন। তারপর প্রায় তিন বছর তারা সেলিম প্রধানকে মাসিক সাড়ে সাত লাখ টাকা আড়তের ভাড়া দেন। এরই মধ্যে সেলিম প্রধান জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তার বাহিনী দিয়ে আড়তটি দখলে নেন।

অপরদিকে বিকাল সাড়ে ৩টায় সেলিম প্রধানের বাড়িতে আবারো হামলার খবর পাওয়া যায়। হামলার পর সেলিম প্রধান গণমাধ্যমকে জানান, মোটরসাইকেলে করে মহড়া দিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি সরকারের সর্বচ্চো মহলের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে মজিবুরের করা অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম প্রধান, আইনি নোটিশের পর মজিবুরসহ তার অংশীদারদের সঙ্গে আমার দুই দফায় বৈঠক হয়। তখন পারস্পরিক সমঝোতায় আমি আমার আড়ত বুঝে নিই। কোনো হামলার ঘটনা তখন ঘটেনি।

সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মজিবুর বলেন, তার বাড়িতে আমাদের কেউ হামলা করেনি। তিনি নিজেই নিজের বাড়ির কাচ ভাঙচুর করে নাটক সাজিয়েছেন।

এদিকে হামলা ও পালটাপালটি সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় গোলাকান্দাইল আড়ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িঘরে হামলার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম