মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের সিট থেকে এক ছাত্রকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দিনগত মধ্যরাতে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪০২নং কক্ষে বসবাসকারী কুদ্দুস আলী নামের মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্রকে কক্ষ থেকে বের দেন।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রথমে ঘুমন্ত কুদ্দুসকে জাগিয়ে তোলেন। পরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার বিছানাপত্র কক্ষের বাইরে ফেলে দেন। একই সময়ে কুদ্দুসকে সিট থেকে নামিয়ে আরেক ছাত্রকে ওই সিটে তুলে দিয়ে চলে যান তারা।
অতীতে ছাত্রদের হলের সিট থেকে নামিয়ে ও তাদের বিছানাপত্র ছুড়ে ফেলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে। শনিবারের ঘটনাটি ছাত্রলীগের সর্বশেষ সিট দখল ও বাণিজ্যের ঘটনা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ হলের অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী কুদ্দুস মাসখানেক ধরে এক বড় ভাইয়ের নামে বরাদ্দ সিট ৪০২ নম্বরে অতিথি হয়ে থাকছিলেন। সম্প্রতি আবাসিকতার জন্য হল প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেন তিনি। হল প্রাধ্যক্ষ কুদ্দুসকে ওই সিটে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। ৪০২ নম্বর সিটটি কুদ্দুসের নামে বরাদ্দ করার আশ্বাস দেন প্রাধ্যক্ষ।
বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শনিবার গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের নেতা (পদবি নেই) ফজলে রাব্বী তার জনাদশেক সহযোগী নিয়ে ৪০২ নম্বর কক্ষের সামনে যান। ওই সময় কক্ষের সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে কুদ্দুসকে সিট থেকে নেমে যেতে বলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তার বিছানা ও বইপত্রসহ জিনিসপত্র কক্ষের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, ছাত্রলীগ ক্যাডার ফজলে রাব্বী রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিবের অনুসারী।
এদিকে রোববার সকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে পোস্ট দিয়ে প্রতিকার চান কর্তৃপক্ষের কাছে। তাতে কিভাবে গভীর রাতে তাকে হলের সিট থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরেন। এরপর বিষয়টি গোটা ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. কুদ্দুস জানান, তিনি ফেসবুকের শিক্ষক-শিক্ষার্থী গ্রুপে দেওয়া পোস্টটি দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তুলে নিয়েছেন। শিক্ষকরা এ ঘটনা নিয়ে তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তাকে বঙ্গবন্ধু হলের ওই কক্ষেই থাকতে বলা হয়েছে। শিক্ষকরা তাকে আশ্বস্ত করেছেন এর দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। শিক্ষকদের কথায় তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন এবং এজন্য কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে ঘটনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, তিনি এ অভিযোগ সম্পর্কে জেনেছেন। তবে কোনো মন্তব্য করবেন না। পুরো ঘটনা জেনে তারপর কথা বলবেন বলে জানান।
গভীর রাতে ঘুমন্ত শিক্ষার্থীকে জোর করে হলের সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে ছাত্রলীগ নেতা ফজলে রাব্বীকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঘটনা সম্পর্কে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে খোঁজ নেবেন। চেষ্টা করবেন সমাধানের।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জোর করে সিট থেকে নামিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে তুলে দিয়েছেন। রাবির হলে হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এ ধরনের ঘটনা গত কয়েক বছর ধরেই চলছে।
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, রাবিতে সিট বাণিজ্য ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতাকর্মীর জন্য একটি লাভজনক কারবারে পরিণত হয়েছে। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবকিছু জেনেও এ ধরনের অরাজকতার কোনো প্রতিকার করেন না।