আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। দেশে আমের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১৩ লাখ টন আম উৎপাদিত হয় বৃহত্তর রাজশাহীর চার জেলায়। আর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উৎকৃষ্ট জাতের আমের বেশির ভাগই উৎপাদিত হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আমের আদি ভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমের ফলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম হয়েছে। রাজশাহীর বাগানগুলোতেও এবার আমের ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। আজ রোববার রাজশাহী জেলা প্রশাসন বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণে সভা ডেকেছে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলায় আম চাষের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে দুই দশকে। যার অধিকাংশই হাইব্রিড জাতের। রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা বলছেন, ‘জাত আম’ বলে যে কথাটা রাজশাহী অঞ্চলে বহুল প্রচলিত আছে সেসব জাত বলতে মূলত : গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, ন্যাংড়া ও ফজলি আমকেই বুঝায়। এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে জাত আমের ফলন বেশ কম হয়েছে। চাষিরা বলছেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। অন্যদিকে নওগাঁয় আম্রপালি, বারি-৪সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের বাগানগুলোতে আমের ভালো ফলন হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, আম চাষি, বাগান মালিক ও ব্যাপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দুই সপ্তাহ বিলম্বে বাগানগুলোতে মুকুল আসা শুরু হয়। ফলে আশানুরূপ মুকুল আসেনি। পরবর্তীতে আমের গুটি শক্ত ও পুষ্ট হওয়ার জন্য হালকা বৃষ্টির প্রয়োজন থাকলেও এ বছর তা হয়নি। এরপর একটানা প্রচণ্ড খরা। এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ চলেছে অঞ্চলজুড়ে। গত তিন দিনে রাজশাহীতে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও আম ফলনের ওপর এই বৃষ্টি বিশেষ কোনো ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।
চাষিরা বলছেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি তাপপ্রবাহ, পোকার উপদ্রব ও সেচ সংকটের কারণে বাগানগুলোতে এবার আম কম এসেছে। মুকুলের তিন ভাগের দুই ভাগ তীব্র খরায় ঝরে পড়েছে। চাষিরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ফজলি আমের বাগানগুলোতে আম নেই বললেই চলে। নেই ন্যাংড়া ও ক্ষিরসাপাত আম। তবে বাণিজ্যিকভাবে করা ঘন বাগান ও ছোট গাছগুলোতে আম কিছুটা রয়েছে। নওগাঁ এলাকার অধিকাংশ বাগান ঘন ও আমগাছ ছোট। এসব বাগানে কিছু আম রয়েছে। নওগাঁয় আমের গরপড়তা ফলন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষি মুকুল শেখ বলেন, এবার বড় বড় আমবাগান প্রায় আমশূন্য। রাজশাহীর পুঠিয়ার আম চাষি সাজাহান আলি বলেন, যেসব বাগানে গত বছর শত শত মন আম হয়েছে সেগুলোতে এবার তেমন আম নেই।
চাষিরা আরও জানান, একদিকে বৃষ্টিহীনতা অন্যদিকে বাগানগুলোতে হপার ও আঁচা পোকা আমের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। কীটনাশক ছিঁটানো হচ্ছে। এরপরও পোকার উপদ্রব কমছে না।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার এমনিতেই আমের মুকুল কম ছিল। তার ওপর মুকুল ফোটার সময়ে ২০ ও ২১ মার্চ সামান্য বৃষ্টি হয়। এতে উপকারের বদলে অপকারই বেশি হয়েছে। অধিকাংশ মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট মুকুল তীব্র খরায় ঝরে পড়েছে। এ কারণে এ বছর আমের ফলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা বলেন, এ বছর মুকুল কম এলেও যে পরিমাণ আম আছে তাতে ফলনে বড় সংকট হবে না।