ছেলে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি না রাখায় বাবা-মায়ের বিষপান
নাটোর ও গুরুদাসপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১১:০৮ পিএম
নাটোরের গুরুদাসপুরে সুদের টাকা ও এনজিওর ঋণ পরিশোধের বিষয়ে পিতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় একমাত্র ছেলের ওপর অভিমান করে বাবা-মায়ের একসঙ্গে বিষপান করার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের হামলাই কোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিষপানে গুরুতর অসুস্থ মো. আলম শেখ (৬৫) ও তার স্ত্রী মোছা. নাজমা বেগমকে (৫৫) স্বজন ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় নাজমা বেগমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আলম শেখ জানান, তার দুই মেয়ে এক ছেলে। একমাত্র ছেলে মো. সবুজ শেখ তাকে কথা দিয়েছিল সব জমি লিখে দিলে সংসারের দায়িত্ব এবং পিতামাতার সব ঋণ পরিশোধ করে দেবে। সন্তানের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে আলম শেখ তার জমি-জমা ছেলের নামে লিখে দিয়েছিলেন; কিন্তু জমি লিখে নেওয়ার পর ছেলে তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। এদিকে ঋণের কারণে পাওনাদারদের অপমান-অপদস্ত নীরবে সহ্য করতে হতো তাকে। অপরদিকে ছেলে ও ছেলের বউ তাদের (মো. আলম শেখ ও তার স্ত্রী মোছা. নাজমা বেগম) সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। একপর্যায়ে নিজেদের জীবনের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী বিষপান করেন।
ছেলে সবুজ শেখের কাছে বাবা-মায়ের বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার চাচাতো ভাই জুয়েল রানা বলেন, তার চাচা-চাচি দুইজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে পরে পারিবারিকভাবে বসে এ বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
আলম শেখের মেয়ে আলপনা খাতুন বলেছেন, তার ভাই সবুজ শেখ বাবার সুদিকারবারি ও আশা এনজিওতে ৫ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধের শর্তে বাবার ভিটাবাড়িসহ সব জমি লিখে নেয়। পরে শর্ত অনুযায়ী এক টাকা ঋণও সবুজ পরিশোধ করেনি। এতে পাওনাদারদের চাপের মুখে পড়ে অসহায় আলম শেখ হতাশ হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে আত্মহত্যার জন্য বিষপান করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. স্নিগ্ধা আক্তার জানান, বিষপান করে মো. আলম শেখ ও তার স্ত্রী মোছা. নাজমা বেগম ভর্তি হয়েছেন। তবে আলম শেখের স্ত্রী নাজমা বেগমের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।