Logo
Logo
×

সারাদেশ

কৃষিজমি উজাড় করছে মাটিখেকোরা, দেখার কেউ নেই

Icon

মো. মোরশেদ আলম, গাজীপুর 

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১২:১০ পিএম

কৃষিজমি উজাড় করছে মাটিখেকোরা, দেখার কেউ নেই

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মাটিখেকোদের থাবায় উজাড় হচ্ছে কৃষিজমি। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। মাটিখেকোরা মানছে না সরকারি নির্দেশনা।

আইন অমান্য করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে গভীর করে কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষিজমি ও কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা আছে কৃষিজমিতে কোনো অবস্থায়ই শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা ও মাটি কেটে অন্যত্র ব্যবহার করা যাবে না।

প্রশাসন কঠোর হলে এসব কৃষিজমির মাটিকাটা বন্ধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এভাবে মাটি কাটায় ওইসব এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল গর্ত ও জলাশয়। এতে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের চাষ করার উপযোগী ফসলি জমি। এভাবে খনন করে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে কৃষিজমি টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের কড্ডা বাজারের উত্তর পাশে লাঠিভাঙ্গা, ইটাহাটা চক, মজলিশপুর, বাইমাইল ও বাঘিয়া এবং জয়েরটেক এলাকায় কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা

হচ্ছে। ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ওইসব এলাকার কৃষিজমি নষ্ট করা হচ্ছে। বাসন থানাধীন লাঠিভাঙ্গা এলাকায় ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে খোকন নামে এক মাটি ব্যবসায়ী। তিনি বেশি টাকার লোভে ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করছেন। এছাড়া ইটাহাটা ও মজলিশপুর এলাকার চক থেকে কৃষিজমির মাটি কেটে একইভাবে বিক্রি করছেন এলাকার মাটি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা। জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় মাটি কাটা হচ্ছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করায় সরকারের রাজস্বও কমে যাচ্ছে। পরিবেশের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া ও জয়েরটেক এলাকায় হুমায়ুন আহমেদ ও রফিক খান নামের দুই ব্যবসায়ী ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।

অন্যদিকে কোনাবাড়ী মেট্রো থানার বাইমাইল এলাকায় মাটি ব্যবসায়ী শিপন, জিকু, হানিফ মিয়া, সুজন ও রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী ১৫ থেকে ২০টি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে।

এসব মাটি ব্যবসায়ীকে থামাতে পারছেন না স্থানীয় প্রশাসন। অভিযান চালিয়েও সফলতার মুখ দেখছে না। অভিযোগ উঠেছে, রাতের আঁধারে জোরপূর্বক কৃষকের ফসলি জমির মাটি কেটে ৬০ ফিট গর্ত করে ফেলেছে একদল প্রভাবশালী মাটিখেকো। জমির মালিক বাধা দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

কোনাবাড়ী বাইমাইল এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক মো. আব্দুল বাসেত বলেন, কিছুদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন মাটিখেকোরা জোরপূর্বক জমিটি দখল করতে চাচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল বাছেদের মেয়ে কোনাবাড়ী মেট্রো থানায় অভিযোগ দেন। এছাড়া গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর কয়েকজন জমির মালিক অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে কোনো প্রতিকার পাননি। মাটি ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, ওই জমিতে ঝামেলা আছে, আসলে জমি তার নয়। এই জমি সে আগেই বিক্রি করেছে। আমরা হাফিজ উদ্দিনের কাছ থেকে মাটি কিনে নিয়েছি। আমরা মাটিগুলো শিপনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। মাটি ব্যবসায়ী শিপনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মাটি ব্যবসায়ী জিকু আহমেদ বলেন, আপনি সন্ধ্যার পরে আসেন আপনার সঙ্গে আমরা সবাই মিলে কথা বলব। এটা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। মাটি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, আমরা কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনে ভেকু দিয়ে কেটে নিচ্ছি। এসব মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসন পৌঁছানোর আগেই আমরা সরে যাই।

গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফয়সাল হক যুগান্তরকে বলেন, ওই এলাকায় অভিযান আগেও হয়েছে। কোথায় কোথায় মাটি কাটা হচ্ছে ও ৬০ ফুট গর্ত হয়েছে, এর সঙ্গে কারা জড়িত, এই তথ্যগুলো দিন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পরেই একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। জরিমানাও করা হয়েছে। তারা অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম