ফাইল ছবি
গাজীপুরে একই লাইনে আসা দুই ট্রেনের সংঘর্ষের একদিন বাদেই সিরাজগঞ্জেও দুই ট্রেনের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তখন চালকরা ট্রেন থামিয়ে ফেলায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনের ৫ নম্বর লাইন ধরে সেতুর দিকে আসছিল কলকাতা থেকে ঢাকাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস। তখন একই লাইন ধরে যাচ্ছিল ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস।
আরও পড়ুন: মিল্টন সমাদ্দারের মানবিকতার আড়ালে প্রতারণা, মুখ খুললেন ব্যারিস্টার সুমন
এ অবস্থায় দুটি ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে ৭৬৯ নম্বর ধূমকেতু এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার মহিদুল ইসলাম ও সহকারী লোকোমাস্টার হেদায়েতুল্লাহ আলামিন ট্রেন থামিয়ে দেন। এরপর মৈত্রী এক্সপ্রেসও থামে, তাতে রক্ষা পায় দুই ট্রেন।
বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ট্রেনের গতি কম থাকায় ভুল সিগন্যালের বিষয়টি চালকদের পক্ষে ধরা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন রেল কর্মকর্তারা।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন এলাকায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে টাঙ্গাইল কমিউটারের পাঁচটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়, দুটি ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়। আহত হয় যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকসহ অন্তত চারজন। এর পরদিনই সিরাজগঞ্জে ভুল সিগন্যাল দেওয়ার ঘটনা ঘটল।
রেল কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৪ নম্বর লাইনে ধরে স্টেশনে প্রবেশ করার কথা ছিল। তবে পয়েন্টসম্যান ভুল করে ৫ নম্বর লাইনে ঢোকার সিগন্যাল দিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ওঠার আগে-পরে ট্রেনের গতি থাকে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে। ফলে দুই ট্রেনের চালকই বিষয়টি দেখতে পেয়ে ট্রেন থামিয়ে দেন।
পরে ধূমকেতু ট্রেনকে পেছনের দিকে নিয়ে পুনরায় ৪ নম্বর লাইনে সিগন্যাল দেওয়া হয়। এরপর দুই ট্রেনই নির্ধারিত গন্তব্যে চলে যায়।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনের ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু প্রকল্পের আওতায় সেখানে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। নতুন লাইনও বসানো হয়েছে। সেখানে রেল কর্মীদের পাশাপাশি সিগন্যালে কাজ করার জন্য প্রকল্প থেকেও কয়েকজন কর্মী দেওয়া হয়েছে। শুক্রবারই নিয়োগ দেওয়া ওই কর্মীদের একজন এই ভুল করেছে।
রেলওয়ের কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে সিগন্যাল ব্যবস্থা দেখভাল করার কথা ছিল। শনিবার ওই দুটি ট্রেনের সিগন্যাল প্রজেক্টের কর্মীরাই দিয়েছে। ভুল পয়েন্ট অপারেশন করেছিল। ওই সিগন্যাল ভুল হওয়ায় দুটি ট্রেন এক লাইনে চলে এসেছিল। নিয়ম হলো তারা আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। কিন্তু আজকের বিষয়টি আমার কনসার্নে ছিল না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। পুরনো রেললাইন পরিবর্তন কাজের অংশ হিসেবে সেখানে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর লাইন নতুন করে বসানো হয়েছে। এখন এই তিনটি লাইনে ট্রেন চলাচল করবে এবং ১, ২ ও ৩ নম্বর লাইন উঠিয়ে নতুন করে তৈরি করা হবে। শনিবারই প্রধান লাইনের সঙ্গে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা দেখার মূল দায়িত্ব অপারেশন বিভাগের। কিন্তু ওই বিভাগের লোকবল ঘাটতি থাকায় চুক্তির অংশ হিসেবে রেলসেতু প্রকল্প থেকে কয়েকজন কর্মী দেওয়া হয়েছে। স্টেশনে অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার (চুক্তি ভিত্তিতে) আছেন, তারা নির্দেশনা দেন কোনো পয়েন্ট সেট করতে হবে। কর্মীরা সেভাবে সেট করে স্টেশন মাস্টারকে কনফার্ম করেন। তারপর স্টেশন মাস্টার সিগন্যাল দেন। শনিবারের ভুলটি স্টেশন মাস্টার করেছেন বলে শুনেছি।