Logo
Logo
×

সারাদেশ

মধুখালীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: হোতা চেয়ারম্যান-মেম্বার ধরাছোঁয়ার বাইরে

Icon

ফরিদপুর ব্যুরো ও মধুখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩১ এএম

মধুখালীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: হোতা চেয়ারম্যান-মেম্বার ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রতীকী ছবি

মধুখালী উপজেলার পঞ্চপল্লিতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে দুই ভাইকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ্ মো. আসাদুজ্জামান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত সরকার ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। নানা অপকর্মে সিদ্ধহস্ত ইউপি চেয়ারম্যান তপন দুবার বরখাস্ত হয়েছেন। দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম এবং বিকাশ প্রতারকচক্রের হোতা চেয়ারম্যান তপন। তপন ও অজিতকে ধরিয়ে দিতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে র‌্যাবপ্রধান বলেছেন, শিগ্গিরই তারা ধরা পড়বেন।

ডুমাইন ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের শাহ মোশাররফ হোসেনের ছেলে শাহ্ আসাদুজ্জামান তপন ২০২২ সালে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

সালিশবাণিজ্য করে তিনি অর্থ হাতিয়ে নেন। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে বাধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ এবং তৎকালীন ইউএনওকে মারধরের ঘটনায় ২০২৩ সালের ৯ মে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে তিনি পদ ফিরে পান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে টিসিবির কার্ড দুর্নীতির কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। 

পঞ্চপল্লিতে শ্রমিকদের খুন, জখম ও মারধরের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত সরাসরি জড়িত। নিহত দুই শ্রমিকের বাবা শাহজাহান খানের দাবিÑচাঁদা না দেওয়ায় তার দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে আমার ছেলে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল, সেখানে ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য অজিত সরকার চাঁদা চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপরই হামলার ঘটনা ঘটে। 

চেয়ারম্যান তপন আগে থেকেই দখল ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তিনি চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম তিনি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এছাড়া বিকাশ প্রতারকচক্রের মূল হোতা তিনি। প্রতারকচক্রের কোনো সদস্য সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক তিনি তাদের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের ছাড়িয়ে নেন। এছাড়া বিকাশ প্রতারকচক্রের টাকা তুলতে এলাকার কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন পাতি নেতাও সহযোগিতা করে। তাদের মধ্যে ইউপি সদস্য নকিব, রাজন, সাঈদ শেখ, কবিরুল, মামুন মাস্টার, আতিয়ার, সাইফুল, মিল্টন, শরিফুল, অদুৎসহ অনেকের নাম উঠে এসেছে। এসব লোক দিয়ে চেয়ারম্যান তপন হাতুড়ি ও জমি দখল বাহিনী গড়ে তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেল্লাকান্দি গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, এলাকায় মাদক, বালুমহাল দখল থেকে শুরু করে সব অন্যায় কর্মকাণ্ডে চেয়ারম্যান তপন জড়িত। তার বিরুদ্ধে কথা বললে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সরকারি সব অনুদান নিজের বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করেন। নাম প্রকাশ না করে ডুমাইন ইউনিয়নের এক ব্যক্তি জানান, খুবই ধুরন্দর তপনের বিরুদ্ধে কেউ গেলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে শায়েস্তা করেন। আর তা না পারলে কৌশলে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তিনি তাদের শায়েস্তা করতে নানা ফন্দিফিকির করেন। তেমনই করেছিলেন পঞ্চপল্লির ঘটনার ওই রাতে। 

১৮ এপ্রিল মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে একটি কালীমন্দিরে প্রতিমার কাপড়ে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। এতে উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের দুই ভাই আশরাফুল (২১) ও আরশাদুল (১৫) মারা যান। বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে কর্মরত দুই ভাইকে হত্যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। 

বিভিন্ন সংস্থার দাবিÑদুই ভাইকে হত্যার সঙ্গে ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও ১নং ওয়ার্ড সদস্য অজিত কুমার সরকারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ২১ এপ্রিল ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের কক্ষে মেঝেতে ফেলে পেটানো হচ্ছে। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান তপন ও ইউপি সদস্য অজিতকে উসকানি দিতে দেখা যায়। 

ডুমাইন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ডুমাইন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুল ইসলাম মাসুম জানান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নিজস্ব দখলদার বাহিনী তৈরিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে চেয়ারম্যান তপন জড়িয়ে পড়েছেন। নিরপক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি। নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পান।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম