মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে হত্যা
ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের দেশত্যাগ ঠেকাতে উদ্যোগ
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৫ পিএম
ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে গুজব ছড়িয়ে দুই কিশোর ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান তপন ও মেম্বার অজিত কুমার সরকার গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত সহোদরের বাবা-মা। চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন বন্দর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দখল-চাঁদাবাজিতে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান তপন। এলাকায় নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিয়ন্ত্রণ। তার নির্যাতনে অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। সালিশ-বাণিজ্য করেও টাকা আয় করতেন এই চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ৪ মে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাধা ও ইউএনওকে মারধর করে বরখাস্ত হন চেয়ারম্যান তপন। পরে আদালতের আদেশে পদে ফেরেন। ইউনিয়ন পরিষদের নানা প্রকল্প বাস্তবায়নেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।
গত ১৮ এপ্রিল পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পাশে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের মারধরের সময় ধারণ করা ভিডিওতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় ইউপি চেয়ারম্যান তপনকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি গাঢাকা দেন। পুলিশ মাগুরা ও যশোরে অভিযান চালিয়ে অল্পের জন্য তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে চেয়ারম্যান তপন ও মেম্বার অজিত সরকার যাতে সহজে পালিয়ে অন্য দেশে যেতে না পারে সে বিষয়ে বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও বিজিবিকে জানানো হয়েছে।
সেদিনের ঘটনার বিষয়ে উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা নিহত দুই কিশোর শ্রমিকের বাবা শাহজাহান খান বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে আমার ছেলে আমাকে মোবাইলে জানিয়েছিল নির্মাণ কাজের জায়গায় ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার অজিত কুমার সরকার মন্দিরের জন্য চাঁদা চেয়েছিলেন ঠিকাদারের কাছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা বাড়িতে চলে যায়। ঈদ শেষে কাজের জন্য এলে ফের চাঁদার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হলে অজিত সরকার তখন চলে যায়। সন্ধ্যার পর তার দলবল এবং স্থানীয় ও পাশের উপজেলার কয়েকজনকে নিয়ে পঞ্চপল্লী স্কুলে এসে নির্মাণ শ্রমিকদের বেঁধে বেদম মারধর করা হয়। মারধরে কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হলে এর মধ্যে দুই ভাই নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল খান (১৭) ও আরশাদুল খান (১৫) মারা যায়। শাহজাহান খান বলেন, আমার ছেলেকে মারধর শুরু করেন চেয়ারম্যান তপন। এরপর অজিত মেম্বারসহ সবাই তাদের মারধর করে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজে বাধা দেন চেয়ারম্যান তপন। ওই সময় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ইউএনওর ওপরও হামলা চালান। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় তপন চেয়ারম্যানের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। দখল-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম তিনি চালিয়ে যান। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারক চক্রের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারসহ জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।