তীব্র রোদ-গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। রাজশাহীতে বইছে তীব্র দাবদাহ। রাজশাহীতে বুধবার তাপমাত্রা ছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর ফলে অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় তিল পরিমাণ ঠাঁই নাই। ওয়ার্ডগুলোতে রোগী ঠাসা। একই চিত্র হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে। বহির্বিভাগেও শিশু ও মেডিসিন চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সিরিয়াল দেখা গেছে। হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর ও জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ বাড়ছেই।
রামেক হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তীব্র দাবদাহে রোগীর ভিড় বাড়ছে। গত ১৬ এপ্রিল হাসপাতালের আউটডোরে ১৯ জন, ইনডোরে ৩৮ জন এবং জরুরি বিভাগে ৭৮ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
১৭ এপ্রিল ১২ বছরের কম বয়সি শিশু ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ২৪ জন। ১২ বছরের বেশি শিশু ভর্তি ছিল ১৪ জন। এটি বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ১২ বছরের কম বয়সি শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ জনে এবং ১২ বছরের বেশি বয়সি ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ভর্তি রয়েছে ১৫ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালে চাপ বেড়েছে।
বহির্বিভাগে শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, তার বাচ্চার বয়স দেড় বছর। গত কয়েকদিন থেকে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছে। এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাইয়েছেন। কিন্তু সুস্থতা আসেনি। তাই সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
জরুরি বিভাগে শিশুকে ভর্তি করেছেন বাঘা উপজেলা সদরের বাসিন্দা আলেয়া বেগম। তিনি বলেন, দুই দিন আগে হঠাৎ করে বাচ্চা পাতলা পায়খানা করে। এরপর পায়খানার দ্বার দিয়ে শুধু পানি নামতে থাকে। বাধ্য হয়ে ওই রাতেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। এখন বাচ্চা অনেকটাই সুস্থ আছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। তাই এ বিষয়ে সর্তক থাকার আহবান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে।