মেহেরপুরের আমঝুপি ভূমি অফিসের তহশিলদার ও অফিসের দালালদের স্বেচ্ছাচারিতায় সেবাগ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নাম খারিজ, খাজনা, হোল্ডিং খোলা, অনলাইন খাজনা পরিশোধের আবেদন অনুমোদনসহ এমন সব কাজেই উৎকোচ নেয়া নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সাধারণ দলিল খারিজ করতে দালালরা জমা দিলে স্বাক্ষর করতে কেস প্রতি ২০০ টাকা, সরাসরি কেউ জমা দিলে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেন, হোল্ডিং খুলতে নেন ২০০ টাকা, ২০০৫ সালের পূর্বে খারিজবিহীন রেজিস্ট্রি দলিল (মিস কেস) খারিজ করতে কেস প্রতি নেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, একই দলিল কোনো দালালের মাধ্যমে জমা হলে স্বাক্ষর করতে নেন ৫ হাজার টাকা, খাজনা দিতে গিলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনলাইনে খাজনা পরিশোধের কয়েকশ আবেদনে কোনো সাড়া না দেওয়াতে তারা খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন না। এই তহশিলদার ইউসুফ আলী নিজের ভাগনে মাহফুজ আহমেদ এবং অপরজন ফয়সাল হোসেনকে মাস্টার রোলে অফিসে নিয়োগ দিয়েছেন। এই দুজনের বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের শেষ নেই। তহশিলদারের অনুপস্থিতিতে তারা তহশিলদারের চেয়ারে বসেও কাজ করেন। এছাড়া ওই ভূমি অফিসে দালাল হিসেবে কাজ করেন আমঝুপির উল্লাস, মদনা গ্রামের সাহাদ আলী ও জালাল, শ্যামপুরের লোকমান আলী ও শামিম হোসেন, হিজুলির কালাম ও উজ্জল, চাঁদবিলের ইমন ও আলেক, গোপালপুরের খায়রুল হোসেন ও কোলা গ্রামের লুৎফর রহমান। আমঝুপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতায় প্রায় ২৫ হাজার হোল্ডিং দাতা রয়েছেন।
সরজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে আমঝুপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়। পাশাপাশি দুটি চেয়ারে বসে আছেন তহশিলদার ইউসূফ আলী ও তার নিয়োগকৃত ফয়সাল হোসেন। ফয়সাল কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। অপর ভাগনে অসুস্থজনিত কারণে সেদিন অফিসে আসেননি। অন্য একটি কক্ষে ভূমি অফিসের রেজিস্টার খুলে বসে ছিলেন দালাল উল্লাস, পাশে একটি টেবিলে পা তুলে বসে ছিলেন আরেক দালাল আসিফ। তড়িঘড়ি করে রেজিস্ট্রার বন্ধ করে উল্লাস এবং আসিফ টেবিল থেকে নেমে চেয়ারে বসেন। উল্লাস বলেন, আমরা জমির খাজনা দিতে এসেছি। পরে কাগজ মিলিয়ে দেখা যায় জমির কাগজ তাদের নয়।
আমঝুপি ইউনিয়নের খোকসা গ্রামের হাছিম উদ্দিন ও রঘুনাথপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, তারা দুজনেই মিস কেস বাবদ তহশিলদার ইউসুফ আলীকে ৫ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। রঘনাথপুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সি আজাদ আলী কয়েক দিন আগে খাজনা দিতে গিয়েছিলেন আমঝুপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। তিনি তার খাজনা নিতে বলাতে তহশিলদার তার সঙ্গে তুই তুকারি করে বাইরে বের করে দেন। আমঝুপি গ্রামের আবুল কাশেম নামের আরেক বয়োবৃদ্ধ বলেন, খাজনা দেওয়ার জন্য কয়েক দিন ধরে ভূমি অফিসে ঘুরতে হচ্ছে। আমি যে জমি কিনেছি তার খাজনা এককভাবে নিচ্ছে না। ওই দাগের অন্য শরিকানাদের সমস্ত জমির খাজনা দিতে বলছে। আমি যাদের সঙ্গে জমি কিনেছি তাদের সব শরিকদের কোথায় পাব। এ দায়িত্ব আমি কিভাবে নেব? টাকা দিলে আবার তারাই সব কাজ করে দেয়। আমি টাকা দিচ্ছি না বলে খাজনা দেওয়া হচ্ছে না।
তহশিলদার ইউসুফ আলী ঘুস নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, এখন সব কাজ অনলাইনে করা হয়। অনলাইনে যারা আবেদন করেন সেখানে আমার কোনো হাত নেই। আমি অনুমোদন দিতে দেরি করলেও এসিল্যান্ড স্যার সেটা চেয়ে নেন। দালালের বিষয়ে তিনি বলেন এই অফিসে কোন দালাল নেই।
সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুঃ তানভির হাসান রুমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।