ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, থাকবে দুটি স্পেশাল ট্রেন

কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০০ পিএম

উপমহাদেশের প্রাচীনতম কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে প্রস্তুত করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ৫ প্লাটুন বিজিবি সমন্বয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য এখন প্রস্তুত এই ঈদগাহ ময়দান।
২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার কলঙ্কজনক অধ্যায়কে সামনে রেখে এবার এমন সর্বোচ্চ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং র্যাব ও পুলিশ বাহিনী। এছাড়া মুসল্লিদের সুবিধার্থে বরাবরের মতোই এবারো ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে আসা-যাওয়া করবে দুটি স্পেশাল ট্রেন।
বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ব প্রাচীন ও বৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রসিদ্ধ কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানটিতে প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের জামাতে দেশ-বিদেশের সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নামাজ আদায় করে থাকেন।
২০১৬ সালে এ মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে প্রবেশ পথের নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দুজন পুলিশ কনস্টেবল, এক গৃহবধূ এবং এক জঙ্গি নিহত হয়। আহত হয় আরও বেশ কজন পুলিশ কনস্টেবল ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। তবু এ ঈদগাহ ময়দানের ধারাবাহিক জামাত আয়োজনে ছন্দপতন ঘটেনি।
জনশ্রুতি আছে, দীর্ঘ দিন আগে এ মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঈদুল ফিতরের জামাতে কাতার গুণে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মিলে। তখন থেকে এই ঈদগাহ ময়দানটিকে সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবে লোকজন ডাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে উচ্চারণ বিবর্তনে এ ঈদগাহ ময়দানের নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই এ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ- লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ছুটে আসতে থাকেন। বিশেষ করে এ মাঠের ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের সাড়ে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ছুটে আসেন।
কথিত আছে, এক শ্রেণির ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মনে করেন, লাখো মুসল্লির সঙ্গে এ ময়দানে পরপর তিনবার ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করতে পারলে এক হজের সমান সওয়াব হয়। এ শ্রেণির মানুষের কাছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান গরিবের মক্কা হিসেবেও পরিচিত।
এবার এ ঈদগাহ ময়দানে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় এ জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ-র্যাব জানিয়েছে, মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ছাড়া কোনো কিছু নিয়ে জামাতে প্রবেশ করা যাবে না। মোবাইল ফোন ও ছাতা নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া থাকবে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে সকাল-দুপুর দুটি বিশেষ ট্রেন আসা-যাওয়া করবে।
ঈদুল ফিতরের জামাতের প্রস্তুতি নিয়ে রোববার দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান সরেজমিন পরিদর্শন করেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও অতিরিক্ত ডিআইজি র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।
ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি কাজ পরিদর্শন শেষে তারা পৃথক প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এ প্রাচীনতম ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ের জন্য দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান।