নাটোরে নুসরাত জাহান মারিয়া ওরফে বৈশাখী (১৮) নামে জেলা ব্যাডমিন্টন দলের নারী খেলোয়ারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের উত্তর বড়গাছা এলাকার হাফসা ছাত্রী নিবাস থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিজের বাবার প্রতি অভিমান করে মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুককে ‘গুডবাই পৃথিবী, আর কোনো দিন দেখা হবে না’ লিখে স্টোরিতে দেন।
বৈশাখী জেলার সিংড়া উপজেলার চামারি ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের রফিকুল মৃধার মেয়ে। বৈশাখী নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রী হিসেবে ছাত্রী নিবাসে পরিচয় দিলেও তিনি চামারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, কোনো কারণে অভিমান করে বৈশাখী আত্মহত্যা করেছেন। ছাত্রী নিবাসটিতে তিনি ডবল বেডের একটি কক্ষ নিয়ে একাই বসবাস করতেন।
বৈশাখী স্থানীয় চামারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলামের ভাতিজি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আত্মীয় বলে জানা গেছে।
হাফসা ছাত্রী নিবাসের মালিক ও নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চুন্নু জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে তার ছাত্রী নিবাসের তৃতীয় তলার ছাত্রীরা তাকে ফোন করে জানান, বৈশাখীর রুমের দরজা বন্ধ রয়েছে। রুম থেকে তারা বৈশাখীর কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছেন না। পরে তিনি বৈশাখীর পরিবার ও নাটোর থানায় বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ছাত্রী নিবাসে এসে বৈশাখীর রুমের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
নাটোর সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, রুমের দরজা বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে ভেতরে যায় পুলিশ। ভেতরে গিয়ে বৈশাখীকে গলায় ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখীর ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো থেকে আত্মহত্যার কারণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওসি মিজানুর রহমান জানান, বৈশাখী শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তার বাবার সঙ্গে পারিবারিক কোনো বিষয়ে কথা বলার সময় রাগ ও মান অভিমানের সৃষ্টি হয়। বিকাল চারটার দিকে তার নুসরাত মারিয়া নামে ফেসবুক আইডি থেকে ‘গুডবাই পৃথিবী, আর কোনো দিন দেখা হবে না’ লিখে স্টোরিতে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন। এর পর থেকেই ছাত্রী নিবাসের দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করেন এবং কোনো এক সময় ফ্যানের সঙ্গে নিজের ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে নাটোরে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। তুচ্ছ ঘটনায় প্রতি মাসে গড়ে এখানে ৫০টির বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ফলে অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলা।