আইআরডিপি’র জালিয়াতি
রিমান্ডে মুখ খোলেনি রাসেল, মিলেছে আরও প্রতারণার তথ্য

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:১৭ পিএম

আইআরডিপি’র (ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল রাসেলকে দু’দিনের রিমান্ড শেষে আজ শনিবার আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে ডিবি পুলিশ তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। তবে তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক প্রতারণার অভিযোগ ও আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সালেহ আহমেদ পাঠান। জানান, মোস্তফা কামাল রাসেল রিমান্ড চলাকালে শক্ত অবস্থানে ছিলেন। তার মুখ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। তবে তার বিরুদ্ধে গাইবান্ধা জেলা আদালত কর্তৃক প্রতারণার মামলায় এক বছরের জেল ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা, বগুড়া জেলা আদালতে ত্রাণের ১০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের দায়ে একটি মামলা ও রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণা ও হত্যাচেষ্টার একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। তার কোনো গোপন ব্যাংক হিসাব আছে কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তার নিজ নামে একাধিক ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ডিবি পুলিশের ওই কর্তকর্তা আরও জানান, অভিযুক্ত রাসেল তিন বছর ধরে রংপুর নগরীতে গোপনে অফিস ভাড়া নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে এই কাজে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আশেক আলীসহ একাধিক ব্যক্তি সহযোগিতা করতেন। তাই তাকে নিয়ে কেউ সন্দেহ করেনি। যুগান্তরে এ নিয়ে একাধিক খবর প্রকাশ হলে বিষয়টি এনএসআই ও মহানগর পুলিশের নজরে আসে। পরে দুই দফা অভিযান চালিয়ে তাকেসহ তার ১১ সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা এখন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
ডিবি পুলিশের মামলায় বলা হয়, ‘আইআরডিপি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ও তার সহযোগিরা মিলে ২০২২ সাল থেকে রংপর নগরীর গোমস্তপাড়ায় অধ্যাপক ডাক্তার আলতাফ হোসেনের বাড়ির নিচতলায় ভাড়া নিয়ে ওই সংস্থার নামে প্রতরণার ফাঁদ পাতে। মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি রাসেল। তিনি গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলা অফিসে পিয়নের চাকরি করেতেন। তারা বাবা গোলাপ হোসেন মণ্ডল ওই অফিসে পিয়ন পদে কর্মরত আছেন। এনআইডি অনুযায়ী তার বাড়ি ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি পূর্ব ছালুয়া গ্রামে। তার প্রথম স্ত্রী পারভীন সংস্থার সহ-সভাপতি। দ্বিতীয় স্ত্রী ধর্মান্তরিত মনি রানী। তিনি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী হিসাবে কর্মরত আছেন।
সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই মাত্র ১০ লাখ টাকা পুঁজি ব্যাংকে গচ্ছিত দেখিয়ে রাসেল রংপুর বিভাগের ৫৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে কমিউনিটি হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে। অথচ তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন তিন মাস ধরে বকেয়া রয়েছে। ওই নির্মাণ কাজে ব্যয় করছে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনি লোকজনের আস্থা অর্জনের জন্য বেআইনিভাবে তার সংস্থার নামে সব নথিপত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম ব্যবহার করতেন।
যুগান্তরের হাতে যেসব নথিপত্র এসেছে তাতে দেখা গেছে, মেসার্স ফারুক ট্রেডার্স রংপুরে ৭৫টি, এসএল করপোরেশন গাইবান্ধায় ৭৩টি, প্রতিমা কনস্ট্রাকশন ও যোগেশ এন্টারপ্রাইজ রংপুরের তারাগঞ্জে ৫টি, জাহাঙ্গির এক্স এস নীলফামারীতে ৩৩টি, মা ট্রেডার্স পীরগঞ্জে ৭টি, স্টার পাথ হোল্ডিং দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ১১টি খায়রুল কবীর রানা রংপুরের পীরগাছায় ২টি, এসপিডি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লালমনিরহাট জেলায় ৪০টি কমিউনিটি হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কার্যাদেশে পেয়ে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, এ বিষয়ে তার দপ্তরে কোনো তথ্য নেই। বিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্য-চিকিৎসা সেবা বা হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও চুক্তি থাকতে হবে। তা না করে সংস্থাটি কী করে রংপুর বিভাগের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্বিতলবিশিষ্ট হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু করেছে তা বোধগম্য নয়। তিনি জানিয়েছেন এটি বেআইনি কার্যক্রম। এ ছাড়া একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নথিপত্রে বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।