হাওড়ে দায়সারা বেড়িবাঁধ, কৃষকরা দুশ্চিন্তায়
সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর থেকে
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম
সুনামগঞ্জের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহৎ নলুয়া ও মই হাওড়ের বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিগত দিনের মতো এবারো সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। পাউবো ও পিআইসির মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে এবারো মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের কাজ করা হয়নি। বাঁধের সঠিক উচ্চতা দেওয়া হয়নি। পুরাতন বাঁধের কাছ থেকে মাটি তুলে নতুন বাঁধ করা হচ্ছে। অনেক স্থানে আগের পুরাতন বাঁধের মাটি খুঁড়ে দায়সারাভাবে নতুন বাঁধ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাঁধে প্রাক্কলনের সার্বিক তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড সাটানো থাকার কথা থাকলেও কোথাও একটি সাইনবোর্ডও চোখে পড়েনি।
জগন্নাথপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সবুজ কুমার শীলের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে- পিআইসির সঙ্গে আতাতের ফলে হাওরে সঠিক উচ্চতার বেড়িবাঁধ হয়নি। দায়সারাভাবে কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা ও পিআইসির মধ্যে।
সরেজমিন নলুয়া হাওড় পরিদর্শনকালে দেখা যায়, হাওরের ৯ নম্বর বাঁধ প্রকল্পের ডুমাইখালী থেকে টংগর পর্যন্ত বাঁধের স্থানে পর্যাপ্ত মাটি পড়েনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮১০ মিটার এ বাঁধের জন্য ২০ লাখ ২১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল মিয়া।
১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর প্রকল্পে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি বলে স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। নলুয়ার হাওড়ের পশ্চিম প্রান্তের গাদিয়ালা থেকে বেতাউকা সুইচ গেট পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পের প্রায় ১৬০০ মিটার কাজের জন্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ তিনটি প্রকল্পের সভাপতি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল মিয়া। বিগত দিনের মতো এবারো একাই তিন প্রকল্পের ৬০ লাখ টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন ছিলাউরা হলদিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রকল্পের পুরাতন বাঁধে নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ভূরাখালী গ্রামের অধিবাসী সিদ্দিক আহমদ বলেন, আমার গ্রামের আশপাশেই বেড়িবাঁধের অবস্থান। পুরাতন বাঁধের কাছ থেকে মাটি খুঁড়ে নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। একটা সিন্ডিকেট প্রতি বছরই বাঁধ নিয়ে মৌসুমি বাণিজ্যে মেতে ওঠে। এবারো একই অবস্থা। পাউবোর সঙ্গে যোগসাজশে এবারো সরকারি টাকার লুটপাট চলছে। আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল মিয়া এবারো ৬০ লাখ টাকার তিনটি প্রকল্প ভাগিয়ে নিয়েছেন।
জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ৩৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৭ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় বাড়ানো হলেও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ কাজ করা হয়নি।
হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কলকলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, হাওড়ের বেড়িবাঁধের জন্য সরকার ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজ হয়েছে নিম্নমানের। প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি বাঁধের উচ্চতা হয়নি। পুরাতন বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ করা হয়েছে দায়সারাভাবে।
তিনি বলেন, হাওড়ে অকাল বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম রয়েছে। দায়সারাভাবে নিম্নমানের বাঁধ নির্মাণ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি শীল জানান, হাওড়ের বেড়িবাঁধের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, নলুয়া ও মই হাওড়ের ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের জন্য সরকার থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এখানে লুটপাটের অভিযোগ সটিক নয়।
জগন্নাথপুরের ইউএনও আল বশিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বেড়িবাঁধের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ মার্চ কাজ সম্পন্ন হয়। আমরা হাওড়ের বেড়িবাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।