অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
সারিয়াকান্দিতে হুমকির মুখে স্থাপনা, জনপদ ও কৃষিজমি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ পিএম
সারিয়াকান্দি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ স্পার ও সেতুর পাশেও বালু তোলা হচ্ছে। বালু বিক্রি করে প্রভাবশালীরা কোটিপতি বনে গেলেও হুমকির মুখে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনপদ ও কৃষিজমি। অবাধে বালু পরিবহণ করায় রাস্তাগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে ভুক্তভোগীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কামনা করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় গত বন্যায় উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া স্পারের গোড়ায় ভাঙন দেখা দেয়। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম স্পারটি পরিদর্শন শেষে দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেন। বর্তমানে এ স্পারের কাছে নিজবলাইল স্পার থেকে অবৈধভাবে ট্রাক্টর দিয়ে বালু পরিবহণ করা হচ্ছে। বালু পরিবহণের সুবিধার্থে স্পারের গোড়া কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। স্পারের ১০০ মিটার এলাকা থেকে দিনভর বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর দিয়ে বালু পরিবহণ করা হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন-সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্পারের দক্ষিণে অবৈধভাবে বোরিং করে বালু তোলা হচ্ছে। তাদের ধারণা-এভাবে বালু উত্তোলন করলে বন্যায় স্পারটি ভাঙন এবং স্থাপনা ও কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়বে। এ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে-ভেলাবাড়ী ইউনিয়নে বাঙালি নদীর উপর নির্মিত জোরগাছা সেতু। সেতুটির উপর দিয়ে পূর্ব বগুড়ার লাখো মানুষ চলাচল করে। কয়েক সপ্তাহ আগে এ সেতুর উত্তর পশ্চিম কোণায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পয়েন্ট চালু করা হয়েছে। সেতুর ১০০ মিটার এলাকা থেকে বোরিং করে ৮০ ফুট নিচ থেকে মোটা বালু তোলা হচ্ছে। যা ট্রাক বা ট্রাক্টরের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ ও চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, সেতুর কাছ থেকে বালু তোলায় এটি নদী ভাঙনের শিকার হবে। এখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন-স্থানীয় বিএনপি নেতা সুজন।
একই ইউনিয়নের ভেলাবাড়ী গ্রামের জামে মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে বাঙালি নদীর কাছে তিনটি ও উত্তর পাশে আরও তিনটি পয়েন্ট রয়েছে। এখানে অবৈধভাবে নদীর ৮০ ফুট নিচ থেকে বোরিং করে বালু তোলা হচ্ছে। চারপাশে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত বিঘা কৃষিজমি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। ভেলাবাড়ী গ্রামের হাজারো পরিবার হুমকিতে রয়েছে। বালু উত্তোলনে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানায়, এখানে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন ভেলাবাড়ী গ্রামের জুয়েল মিয়া।
জোরগাছা সেতুর পূর্ব-উত্তর পাশেও বেশ কয়েকটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন যন্ত্র ড্রেজার চালু রয়েছে। এখানকার বালু দিয়ে ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব পাশের একটি বিশাল ডোবা ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া জোরগাছা গ্রামের নিচু এলাকা ভরাট করা হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোর মতো উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল গ্রামের স্লুইচ গেটের পূর্ব পাশে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের একটি পয়েন্ট আবারো নতুন করে চালু হয়েছে। এখানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ১০০ মিটার এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে সারিয়াকান্দির একমাত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ।
এসব ছাড়া উপজেলার নারচী ইউনিয়নের চরগোদাগাড়ী গ্রামে বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন রয়েছে। বাঙালি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পাইপ দিয়ে পরিবহণ করে এ এলাকায় বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাট করা হচ্ছে। একই গ্রামের টুকুর খেয়া ঘাটেও দুটি বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন চালু রয়েছে। এখানে বালু উত্তোলনের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী মিনারুল ইসলাম জড়িত। এছাড়া উপজেলার কাজলা, কর্ণিবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের একাধিক স্থানে বোরিং করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
জোরগাছা সেতু এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মূল হোতা সুজন মিয়া বলেন, ‘এখানে মাত্র তিন সপ্তাহ ধরে বালু তুলছি। দু’একদিন বালু তুললে ব্রিজের কিছুই হবে না।’ ভেলাবাড়ী গ্রামের জুয়েল মিয়া বলেন, ‘বিকাশ নম্বর দিন, আমি আপনার সঙ্গে পরে দেখা করব।’
এ প্রসঙ্গে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুর রহমান বলেন, এর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের সরাসরি জেলে পাঠানো হয়েছে। আবারও বালু উত্তোলনের খবর জানা নেই। বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।