রুয়েটের সাবেক ভিসি-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রুয়েটে অবৈধ পন্থায় নিয়োগ দেওয়া ১৩৫ জনের মধ্যে ১৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ অনুসন্ধান শুরু করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত জানুয়ারিতে মামলার অনুমোদন চাওয়া হয়। কয়েক দিন আগে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ থেকে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধান শেষে রুয়েটের সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার অধ্যাপক সেলিম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মঞ্জুরি পাওয়া গেছে। দ্রুতই তিনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন।
তিনি আরও বলেন, ১৩৫ জনের নিয়োগে কমবেশি অনিয়ম হয়েছে। তবে তার মধ্যে ১৭ জনের নিয়োগ নিয়ে দুদক মামলা করবে।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই চার বছরের জন্য রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি ১৩৫ জন শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেন। ২০২১ সালের ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ অনুমোদন ও বৈধ করা হয়। তবে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি-বিধান লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠে। এর মধ্যে সাবেক ভিসি নিজের কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকেও নিয়োগ দেন নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে যারা নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য ছিল না।
এদিকে এসব নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসিতে অভিযোগ হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির একটি তদন্ত কমিটি নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো তদন্ত করেন। তদন্তে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা মিলে। ইউজিসি থেকে তদন্ত প্রতিবেদন অধিকতর তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে রুয়েটে বিতর্কিতভাবে নিয়োগ পাওয়া ১৩৫ জনের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। যদিও এসব নিয়োগ অদ্যাবধি বাতিল হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, যে ১৩৫ জনের নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৩ জন শিক্ষকসহ ১১৮ জনের নিয়োগের বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ রুয়েটের বিধি-বিধান অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগসহ কতিপয় নিয়োগে সংক্রান্ত বিষয়টি ফৌজদারি কার্যবিধিতে নেওয়া হয়নি। তবে এই ১৩৫ জনের মধ্যে মোট ১৭ জনের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
এই ১৭ জনের মধ্যে সাবেক ভিসির আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। যাদের কেউ কেউ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও তাদের মৌখিক পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয় অবৈধভাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার নেই। মামলা হলে আইনগতভাবে তা মোকাবিলা করবেন বলে জানান তিনি।