একটি ব্রিজের অভাবে ২০ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি
দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
দাগনভূঞার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী থেকে উৎপত্তি মানিকছড়া খাল ফেনী ও কুমিল্লার প্রান্তসীমায় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে সেচ প্রকল্পের আওতায় বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা। এ খালটি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার তপোবন, সাতবাড়ীয়া হয়ে কুমিল্লার ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
এ খালটি ব্রিটিশ আমলে শেষ খননকাজ হয় বলে জনশ্রুতি আছে। মানিকছড়া খালটির একটি শাখা ফেনীর রঘুনাথপুর ও নন্দীরপাড় গ্রাম হয়ে নোয়াখালীর গাজিরহাটের পাশ দিয়ে ছাতারপাইয়া সোনাইমুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। আরেকটি শাখা অষ্টগ্রাম হয়ে বক্সগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে কুমিল্লার ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৫০ হাজারের অধিক ও উপকারভোগী গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৫৬টি। উপকারভোগী জনসংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। ফেনীর দাগনভূঞার কৈখালী গ্রাম থেকে লাঙ্গলকোট উপজেলার চৌয়ারা প্রায় ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এ জলাভূমি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান বোরো আবাদে সবুজের সমারোহ। দৃষ্টি সীমানার বাইরে ও সুদূর মাঠজুড়ে হাজারও চাষির কাক্সিক্ষত ফসল বোনা মাঠে দৃষ্টিনন্দন চোখ জুড়ানো এবং মনমাতানো ধানখেত আর সেচযন্ত্র। কৃষকরা বোরো আবাদে কর্মব্যস্ত দিন পার করছেন। মানিকছড়া খালের ওপর দিয়ে দুই জেলার কৃষক কিষাণিসহ প্রয়োজনের তাগিদে কেউ কুমিল্লার গুণবতী বা কেউ দাগনভূঞার দরবেশেরহাট বাজারে আসছেন একমাত্র পারাপারের অবলম্বন নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে। খালটির প্রস্থ ৯০ ফুট। খালটির গভীরতা ১৬ ফুট। বাঁশের সাঁকোটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে জনস্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মাণ করেছেন। সাঁকোটির দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট। খাল থেকে সাঁকোটির উচ্চতা ১৬ ফুট। সরেজমিনে দেখা যায়, খালের পানির পরিমাণ কোথাও ছয় ইঞ্চি আবার কোথাও এক ফুট, কোথাওবা একেবারে পানি নেই। এলএলপি বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র প্রায় এক হাজার ৫২৩টি। গভীর ও অগভীর নলকূপ প্রায় দুবা হাজার ৩০৫টি। মানিকছড়া খালের উভয় পাশে আউশ, আমন ও রবি মৌসুমে বোরো ও রবিশস্যের চাষাবাদ মৌসমভিত্তিক হয়। মানিকছড়া খাল পারাপারে ২০ গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের কৌশল্যা, রঘুনাথপুর, সিন্দুরপুর, চন্দ্রপুর, সেকান্দরপুর গ্রাম এবং কুমিল্লার লাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাতবাড়িয়া এবং গুণবতী ইউনিয়নের তপোবন, সাতবাড়িয়া, অষ্টগ্রাম, খাটোরা, আলোকদিয়া, বক্সগঞ্জ গ্রামসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরশা মানিকছড়া খালের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে তিন জেলার পাঁচ উপজেলার শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। তাতে একটি ব্রিজের অভাবে যাতায়াত ও পরিবহণে চরম ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। সিন্দুরপুর, কৌশল্যা, আলোকদিয়া, তপোবনের মাঝে প্রবাহিত মানিকছড়া খালের ওপর পাকা সেতু না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোটি আশপাশের ২০ গ্রামের লোকজনের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালটির ওপর পাকা সেতু নির্মাণ সময়ের ও প্রয়োজনের দাবি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। মানিকছড়া খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কৃষক তার প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ বহন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভোগান্তির শিকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন চৌধুরী, স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক স্বাস্থ্য সহকারী আবদুর রব যুগান্তরকে জানান, এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান দুঃখ হলো মানিকছড়া খালের ওপর নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো এবং খালের নাব্য। আশপাশের ২০ গ্রামের হাজারও শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম মানিকছড়া খাল পারাপারে বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত। প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন নিবেদন কোনো সুফল মিলছে না।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা বলেন, জন ও কৃষিবান্ধব মানিকছড়া খালের ওপর ব্রিজ ও খাল পুনঃখননের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে আগামী বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।