সাদা ইঁদুর পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১১:২১ পিএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় নাসির উদ্দিন অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর পালন করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তার ইঁদুর পালনের খবরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আবদুল্লাহপুর গ্রামের নাসির ইউটিউব দেখে ইঁদুরের খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি ইঁদুর বিক্রিও করছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন তার কাছে ইঁদুর কিনতে আসছে। ইঁদুর পালন করে তিনি লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। জানা গেছে, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া অনেকে শখের বশেও ইঁদুর পালন করেন। সাদা ইঁদুরের পালন বেশ লাভজনক।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন নাসির উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে বেশ কয়েকটি লোহার খাঁচায় ইঁদুর ছোটাছুটি করছে। আবার দলবেঁধে তারা খাবারও খাচ্ছে। হার্ডবোর্ডের তৈরি কয়েকটি বাক্সে সদ্যোজাত বাচ্চা রাখা হয়েছে। বিড়ালের থাবা থেকে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাসির উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে আসি। কৃষিকাজ, হাঁস-মুরগি ও দেশি-বিদেশি কবুতর পালন শুরু করি। পাশাপাশি মুদি ব্যবসাও করি। কিন্তু আয় কম হওয়ায় বিকল্প পেশা খুঁজতে থাকি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ করে ইউটিউবে ইঁদুর পালন ও চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারি। পাঁচ মাস আগে ঢাকার কাঁটাবন থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের অ্যালবিনো প্রজাতির ১০টি সাদা ইঁদুর সংগ্রহ করি। ইঁদুর কেনাসহ অন্যসব কাজে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।
নাসির আরও জানান, কিছু দিন যেতে না যেতেই একটি ইঁদুর আটটি বাচ্চা দেয়। কয়েক দিনের মধ্যে আরও তিটি ইঁদুর বাচ্চা দেয়। অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুর ৪০ দিন পরপর ৮-১৫টি বাচ্চা দেয়। বছরে ৬-৭ বার বাচ্চা দেয়। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় আকারের ২০০টি ইঁদুর রয়েছে। তিনি বলেন, ইঁদুরগুলোকে দৈনিক গম, ভুট্টার গুঁড়া ও ধান দেওয়া হয়। সকাল ও রাতে দুই বেলা খাবার দেওয়া হয়। দৈনিক ৫০-৬০ টাকার খাবার লাগে। এদের কোনো রোগ-বালাই নেই। তিনি জানান, একটি বড় আকারের ইঁদুর ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, দেশে সাদা ইঁদুরের ভালো চাহিদা রয়েছে। ভারতেও চাহিদা রয়েছে। তার খামারে যে পরিমাণ ইঁদুর রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চাহিদা রয়েছে। তাকে দেখে স্থানীয় লোকজনও ইঁদুর পালন শুরু করেছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পেলে বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারের খামার করা সম্ভব। নাসিরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জুবাইদা আক্তার জুঁই জানায়, বাবা বাড়িতে না থাকলে ইঁদুরগুলোকে সে-ই দেখভাল করে। আগে এগুলো তাকে ভয় পেলেও এখন তারা তার ভক্ত হয়ে গেছে।
আমিন চৌধুরী, কালাম চৌধুরী, শাকিলসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, ইঁদুরের যন্ত্রণায় যেখানে উপজেলা কৃষি অফিস ইঁদুর নিধনে পুরস্কার ঘোষণা করে সেখানে নাসির উদ্দিন ইঁদুরের খামার গড়ে তুলে বেকারত্ব দূর করেছে। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
আখাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বলেন, অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর পালন লাভজনক। খরচ কম আয়ও বেশি। এগুলো মূলত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া শৌখিন লোকজনরা শখের বসে ইঁদুর পালন করে।