রমজান উপলক্ষ্যে অটোরিকশাচালকের বিশেষ ছাড়
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে অটোরিকশার নির্দিষ্ট ভাড়া থেকে ৫ টাকা ছাড় দিয়েছেন এক চালক। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় টাঙানো এমন একটি ব্যানার নজর কেড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষের।
বিষয়টি সামান্য মনে হলেও উদ্যোগটা মহৎ। কেননা, রমজান উপলক্ষ্যে দেশের সর্বত্র সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। আর এই সময়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পবিত্র রমজান মাসজুড়ে সামান্য আয়ের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়া কমিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাঈদুল ইসলাম (৩৬) নামে এই অটোরিকশাচালক।
যে কেউ যাত্রী হয়ে তার অটোরিকশায় উঠে গন্তব্যে পৌঁছার পর নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে তিনি কম নিচ্ছেন ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। আর এ জন্য তার অটোরিকশায় সামনে-পেছনে ব্যানার করে লাগানো হয়েছে ডিসকাউন্টের অফার।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অটোরিকশায় টাঙানো যাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি অটোরিকশার টাঙানো ব্যানারে লিখেছেন— 'পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে নির্দিষ্ট ভাড়া থেকে ৫ টাকা ছাড়’।
সেই ছবিতে সঞ্চয় রায় নামের একজন লিখেছেন, এ রকম মহৎ কাজ এই যুগে কে করে? রবিউল ইসলাম নামের আরও একজন লিখেছেন, ‘এভাবে সবাই যদি নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসে একদিন সব সম্ভব’। আসাদ নামের আর একজন লিখেছেন, ‘এখন আমাদের উচিত অটোরিকশাচালক ভাইকে ৫ টাকা বেশি বকশিস দেওয়া’।
ওই অটোরিকশাচালক সাঈদুল ইসলাম কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনিবাড়ি ইউনিয়নের রুপার খামার এলাকার বাসিন্দা। সংসারজীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। ছেলে স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
এ বিষয়ে অটোরিকশাচালক সাঈদুর ইসলাম বলেন, আমি রমজান মাসের আগে ফেসবুকে দেখেছি সৌদি আরবের একটি দোকানে রমজান উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করলে ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। এটা দেখে চিন্তা করলাম, আমি আসলে রমজান মাসে মানুষের জন্য কি করতে পারি। আমার তো আর কোনো সামর্থ্য নাই, তাই যেহেতু আমার একটি অটোরিকশা আছে, তা হলে অটোরিকশার যাত্রীদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা করি। এই চিন্তা থেকে আসলে আমার এটা করা। আমার এই ছাড় যাত্রীদের জন্য পুরো রমজান মাসজুড়েই থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আগে আমি ঢাকায় একটা কোম্পানিতে চাকরি করতাম। পরে বাড়িতে এসে গত ১০-১২ বছর থেকে অটোরিকশা চালাই। এই অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চলে আমার।
আমার এই ছাড়ের বিষয়টি দেখে অন্যন্য অটোরিকশাচালকরা আমাকে অন্যায় কথাবার্তা বলছে। তবে আমি কিছু মনে করছি না। আমার অটোটি চালাচ্ছি, চিলমারী উপজেলা হতে কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও রাজারহাট রোডে। যেমন উলিপুর থেকে জনপ্রতি কুড়িগ্রাম ৩০ টাকা ভাড়া, আর আমি বর্তমানে ভাড়া নিচ্ছি ২০-২৫ টাকা।
কলেজছাত্র মাহমুদ হাসান বলেন, পবিত্র রমজান মাসে অটোরিকশাচালক ভাই যাত্রীদের জন্য যে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছে। এটা আমার কাছে মহৎ কাজ মনে হচ্ছে। তার দেখাদেখি আরও অনেকে বিভিন্ন ভাবে রোজাদারদের জন্য এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের এরশাদুল হক নামের একজন বলেন, পবিত্র রমজান মাসে একজন অটোরিকশাচালক যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে আসলে তিনি প্রশংসার দাবি রাখেন। বিষয়টি আমার খুবই ভালো লেগেছে। এই ভাইটির জন্য দোয়া ও শুভকামনা থাকল।