Logo
Logo
×

সারাদেশ

প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনায় মেয়র লিটনের বিরুদ্ধে বিষোদগার

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম

প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনায় মেয়র লিটনের বিরুদ্ধে বিষোদগার

নবনিযুক্ত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারার সংবর্ধনার অনুষ্ঠানে রাজশাহীর উন্নয়নের কথা না বলে শেষ অবধি মেয়র লিটনবিরোধী অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

শনিবার সন্ধ্যায় সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনের কথা বলা হলেও এ সভায় ছিলেন না আওয়ামী লীগের এই দুই শাখার শীর্ষ পদধারী নেতাসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী।

এদিকে প্রতিমন্ত্রী দারাকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে সমানে বিষোদগার করেন রাজশাহীর তিনজন বর্তমান ও একজন সাবেক সংসদ সদস্য।

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাজশাহীর মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রতিমন্ত্রী দারাকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে করা বিষোদগার ছিল নজিরবিহীন। 

তাদের আরও অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভায় কোনো সংসদ সদস্য রাজশাহীর উন্নয়নের কথা বলেননি। মেয়র লিটনের বিরুদ্ধে শুধু বিষোদগার করার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করায় নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে দেওয়া এ সংবর্ধনা সভার আয়োজক হিসেবে ব্যানারে লেখা হয় রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। 

যদিও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালসহ কমিটির অধিকাংশ পদধারী নেতাকর্মী  উপস্থিত ছিলেন না। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাননি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারসহ কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ নেতাকর্মী ছিলেন সংসদ সদস্যদের অনুসারী।
 
এদিকে প্রতিমন্ত্রী দারার সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে মেয়র লিটনকে ইঙ্গিত করে ওমর ফারুক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, রাজশাহীকে আজ রাহুমুক্ত ঘোষণা করা হলো। আজ থেকে আওয়ামী লীগকে সব নেতাকর্মীর কাছে রাজশাহীর সংগঠনকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। 

তিনি আরও বলেন, আজ থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাথা উঁচু করে চলবে। আজ থেকে আমরা প্রতিমন্ত্রী দারার নেতৃত্বে পথ চলব। রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে ন্যায়বিচার কায়েম করব। আজ মাত্র ট্রায়াল দিলাম। সামনে আমরা কিছু দেখাব। 

রাজশাহীকে মুক্ত ঘোষণা করা মানে কি বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, মুক্ত মানে রাজশাহীকে রাহুমুক্ত করা হলো। 

রাহু বলতে কাকে বুঝিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, যার বোঝার সে ঠিকই বুঝবে। রাজশাহীর মানুষ সবাই বুঝতে পারবে। 

অন্যদিকে রাজশাহী-৫ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সংবর্ধনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে উদ্দেশ্য করে সমানে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে রাজশাহীর মেয়রের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বক্তব্য দেন কালাম। কালামের বক্তব্য চরমসীমায় পৌঁছালে মঞ্চে থাকা একজন আইনজীবী নেতা ইশারা করে তাকে থামতে বলেন। এ সময় আর বক্তব্য না দিয়ে সংসদ সদস্য কালাম নিজ আসনে বসে পড়েন। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, কালামের নিজের অতীতের দিকে তাকানো উচিত। কালাম আগে কে ছিলেন আর এখন কি হয়েছেন। কালামের মতো একজন দাগি সন্ত্রাসী এমপি হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন। আমার ও মেয়র লিটনের বিরুদ্ধে করা নজিরবিহীন বিষোদগারের বিষয়ে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ন্যায়বিচার চাইব। 

অনিল সরকার আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিমন্ত্রী দারা মঞ্চে থেকেও কালামকে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগে বাধা দেননি। জেলা আওয়ামী লীগের নামে সংবর্ধনার আয়োজন করা হলেও সভাপতি হিসেবে আমাকে ডাকা হয়নি। এমপিদের এমন লাগামহীন ও দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্যে দলের ভেতরে গ্রুপিং উৎসাহিত হবে।    

এদিকে সংবর্ধনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন মেয়র লিটনকে ইঙ্গিত করে বলেন, তার সঙ্গে থাকলে ভালো আর না থাকলে খারাপ— এমন মনোভাবে তিনি চলেন। 

আয়েন আরও বলেন, তার একক নেতৃত্বে রাজশাহীতে দল সংগঠিত হয়নি। তার সঙ্গে না থাকলে রাজাকারের সন্তান হয়ে যায়। সংবর্ধনা সভায় ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম।  

এদিকে সংবর্ধনার জবাবে দেওয়া বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা এমপি ফারুকের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ফারুক ভাই রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে রাহুমুক্ত ঘোষণা করেছেন। আজ থেকে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ রাহুমুক্ত হলো। এ কথাটির বিশাল মর্মার্থ আছে। আমার পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের দলের বহু নেতাকে এই শহরের একজন নেতা মুনাফেক বানিয়েছেন। বেইমান বানিয়েছেন। দুর্গাপুর পুঠিয়াতে আমার চেয়ে যোগ্য নেতা আর কে আছে। আমার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে এত ভোট পায় কীভাবে একজন প্রার্থী। এর একটাই কারণ টাকা আর রাজনৈতিক মহাশক্তির ইশারা। ভবিষ্যতে আর কিছু করতে দেওয়া হবে না। 

এদিকে প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে করা বিষোদগার সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ওটা সংবর্ধনা সভা ছিল না। ওটা ছিল লিটন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিষোদগার সভা। আমরা দলের নেতাকর্মীরা সব কিছু শুনেছি। দ্রুত সময়ে এর জবাব দেওয়া হবে। প্রথমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর গোচরে এনে দলে ভাঙ্গন ও কোন্দল সৃষ্টিকারী এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাব। 

বিষোদগার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পুরো বিষয়টি ছিল পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। খোদ রাজশাহী নগরীতে এই ধরণের একটি সভার আয়োজন করা হলেও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে আমাকে জানানো হয়নি। সংবর্ধনা সভায় রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিরাই ডাক পাননি। এমনকি সংবর্ধনা সভার ব্যানারে শহিদ জাতীয় নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামানের ছবিটাও দেয়নি তারা। সংবর্ধনার নামে রাজশাহীতে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করাই তাদের ছিল উদ্দেশ্য। তাকে (দারাকে) প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে রাজশাহী তথা দেশের উন্নয়নের জন্য। সেখানে তিনি রাজশাহীতে গিয়ে সংবর্ধনা নেওয়ার নামে দলে গ্রুপিং তৈরি করলেন। সময়ই এর জবাব দেবে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম