তরমুজ খেতে পানি সেচ নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা
তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম
বরগুনার তালতলীতে তরমুজ খেতে পানি সেচ দিতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শতাধিক কৃষক। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে কয়েক কোটি টাকা। এ বিষয়ে থানা ও ইউএনও অফিসে অভিযোগ দিলেও তোয়াক্কা করছেন না বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ম্যানেজার ফারুক মোল্লা।
জানা যায়, উপজেলার কবিরাজপাড়া এলাকায় প্রতি বছরই ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার তরমুজসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও আমন ও বোরো চাষাবাদ করা হয়। এজন্য গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএডিসির সমিতির মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ফারুক মোল্লাকে ওই সমিতির ম্যানেজার করা হয়। সেচ প্রকল্প শুরু থেকেই ফারুক মোল্লা তার নিজের বলে দাবি করেন। এই সেচ প্রকল্পের অধীনে ২০ হেক্টর জমি রয়েছে। তবে ফারুক মোল্লার সঙ্গে সাধারণ কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ১০-১২ হেক্টর জমিতে সেচের পানি দেওয়া হয় না। এতে প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বোরো, আমন ও তরমুজ চাষিরা। পানির অভাবে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ফসল। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও তারা সমাধান পাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগে ঘটনাস্থলে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে সিদ্ধান্ত দিলে তা না মেনে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন ফারুক মোল্লা। পরে উপায়ান্ত না পেয়ে স্থানীয় চাষিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও ফারুক মোল্লাকে শুনানির জন্য নোটিশ করে ৩ মার্চ উপস্থিত থাকতে বলেন। ৩ মার্চ ফারুক মোল্লা ইউএনওর অফিসে না এলে পরবর্তীতে ৪ মার্চ তাকে ধরে আনা হয়। ওই দিন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ ফরাজীর মাধ্যমে তরমুজ চাষের জন্য কৃষকদের সেচের পানি দেবেন বলে ইউএনওর সামনে ফারুক মোল্লা স্বীকার করেন। তবে পর দিনই চাষিদের পানি না দিয়ে উল্টো তাদের হুমকি দিয়ে আসছেন।
স্থানীয় তরমুজ চাষি নজরুল বলেন, কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষে সেচের অভাবে কষ্টে আছি। সাবেক ইউএনও কাওসার সাহেব ও এসএম সাদিক তানভীর স্যার বারবার আমাদের পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং প্রতি বছর অস্থায়ীভাবে সমাধান হয়েছে। নতুন ইউএনও এলেই আবার নতুনভাবে ঝামেলা করেন ফারুক মোল্লা। তিনি তার আত্মীয় সাবেক এক সচিবের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন।
বিএডিসি ম্যানেজার ফারুক মোল্লাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোসাদ্দেক জানান, সেচ প্রকল্প দেওয়া হয়েছে জমিতে পানি সরবারহ করার জন্য। স্থানীয় বিরোধ নিয়ে ওই সেচের ম্যানেজার জমিতে সঠিকভাবে পানি দিচ্ছে না বলে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তিনি যদি পানি না দেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেচ কমিটির সভাপতি সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, কবিরাজপাড়া এলাকার বিএডিসি সেচের পানি কৃষকদের না দেওয়ার একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। সেখানে ফারুক মোল্লা কৃষকদের পানি দেবেন মর্মে স্বীকার করেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কৃষকদের পানি দিচ্ছেন না। কয়েক বছর ধরে সেচের পানি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ওই কার্যালয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।