স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে জখম করায় দুই পুলিশকে প্রত্যাহার
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাদল উদ্দিন নামে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে মাদকাসক্ত আখ্যা দিয়ে পথরোধ করে পিটিয়ে আহত করেছে দুই পুলিশ কনস্টেবল ও তাদের এক সোর্স (সাংবাদদাতা)।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদল উদ্দিন বাগাতিপাড়া উপজেলার রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি বর্তমানে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে বাগাতিপাড়া মডেল থানা থেকে নাটোর পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদল উদ্দিন জানান, রোববার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে বিদ্যালয় ছুটির পর মোটরসাইকেলে নাটোর শহরের বাসায় ফেরার পথে রহিমানপুর ও জিগরীর মধ্যবর্তী ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল সজিব খান ও কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান এবং পুলিশের স্থানীয় সোর্স বিদ্যুৎ তার কাছে মাদক থাকার অভিযোগ তুলে পথরোধ করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ফেলে। এ সময় বিদ্যুৎ নামে পুলিশের স্থানীয় সোর্স রড দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। তাদের আঘাত সহ্য করতে না পেরে তিনি দৌড়ে পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিলে এক মাদ্রাসার শিক্ষকের সামনেই পুলিশের দুই সদস্য তাকে বলে তোর কাছে মাদক আছে। পরে তারা দুইটা কাগজ (পুরিয়া) বের করে বলে এর কাছে হেরোইন পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, পুলিশ সদস্যরা তাকে প্রথমে থানায় নিতে চাইলেও পরে দুই হাজার টাকা দাবি করে ছেড়ে দিতে চায়। তারা ওই শিক্ষকের মানিব্যাগ থেকে চারশ টাকা নিয়ে বাকি টাকা বিকাশে পাঠাতে বলে একটা বিকাশ নাম্বার দিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে তারা বেশ কয়েকবার টাকার জন্য ফোনও করেছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।
তিনি আরও বলেন, রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনির উদ্দিন ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলে আছে। সেই কারণে তাদের যোগসাজশেই এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে তার ধারণা।
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান জানান, একটা ইনফরমেশন ছিল, তাই আমরা এসে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলাম। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ এসে মারধর শুরু করে। সেই সময় বিদ্যুৎ ওই শিক্ষকের কাছ থেকে কাগজ বের করে বলল ২ পুরিয়া হেরোইন পাওয়া গেছে।
বাগাতিপাড়া থানার ওসি মো. নান্নু খান যুগান্তরকে বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য ওই শিক্ষককে মারপিট করেনি। বিদ্যুৎ নামে তাদের থানার এক সোর্স ওই শিক্ষককে মারধর করেছে। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মাহমুদা শারমিন নেলী নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি স্কুলশিক্ষকের কাছে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জেনে পুলিশ সুপারকে জানান। পরে পুলিশ সুপার অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে বাগাতিপাড়া মডেল থানা থেকে নাটোর পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করে নেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। তাই আহত শিক্ষক এখনো লিখিতভাবে বিচারের দাবি না জানালেও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।