সেই সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল ও বাসাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৯ পিএম
কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অদালতের বিচারক মো. মাহমুদুল মোহসীন এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বিষয়টি টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ জুন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বাদী হয়ে ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। আদালত এ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে পুলিশ ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে ৩৯৩ ধারা প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি তিনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এ সময়ও তিনি অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে ওই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি লিখিত অভিযোগে বলেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে ইউএনও তার সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পারিবারিকভাবে তার (ছাত্রীর) বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক হলে, তিনি (ছাত্রী) বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলতে থাকেন। ইউএনও বিয়ের কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তারা দুই মাস থাকেন।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল হয়ে তাকে (ছাত্রীকে) নিয়ে কলকাতায় যান ইউএনও। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদে যান। সেখানে তারা দুজন চিকিৎসা নেন। পাসপোর্ট দেখে তিনি জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত। সেখানে থাকার সময় তার মোবাইল ফোন থেকে দুজনের ভিডিও ও কথোপকথন মুছে ফেলেন ইউএনও। ভারতে ১২ দিন অবস্থানের পর ৫ অক্টোবর তারা দেশে ফিরে আসেন। তারপর থেকে ইউএনও তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে জেলা প্রশাসন গত বছরের ৭ এপ্রিল ওই কলেজছাত্রী, সাবেক ইউএনও মো. মনজুর হোসেন, তার গাড়িচালক বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ইউএনও মো. মনজুর হোসেনকে বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। সর্বশেষ তিনি নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে ও মন্ত্রিপরিষদের তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, আদালত মঙ্গলবার এ মামলার বাদীর সাক্ষী গ্রহণ করেছেন। ওই সময় বিবাদী মনজুর হোসেন আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।