স্ত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব, ছোট ভাইকে হত্যার পর পুঁতে রাখে বড় ভাই
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল ও কালিহাতি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২২ পিএম
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর পারখী ইউনিয়নের বগা বিলে মাটিচাপা দেওয়া গলিত অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই। স্ত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার কারণে প্রবাস-ফেরত বড় ভাই মো. সোহেল ছোট ভাই মুকুলকে (২৪) এক বন্ধুর সহযোগিতায় শ্বাসরোধে হত্যার পর বিলের কাদামাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন।
রোববার টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন এক সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন বলেন, পারখী ইউনিয়নের মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি কাদামাটির নিচে পুঁতে রাখা গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরনের জামা-কাপড় দেখে পারখী গ্রামের গৃহবধূ লিমা আক্তার লাশটি তার নিখোঁজ স্বামী মুকুলের বলে শনাক্ত করেন।
মুকুল সখীপুরের ইন্দারজানীতে শ্বশুরবাড়িতে থেকে খুংগারচালা বাজারে ইলেকট্রিক দোকান চালাতেন। ২৭ জানুয়ারি মুকুল স্ত্রীকে ফোনে জানান তিনি পৈতৃক বাড়ি কালিহাতীর পারখী যাচ্ছেন এবং রাতে ফিরবেন না। এরপর থেকে মুকুল নিখোঁজ ছিলেন।
বগা বিলে কাদামাটির নিচ থেকে পাওয়া লাশ শনাক্তের পর লিমা আক্তার কালিহাতী থানা হত্যা মামলা করেন। ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছায়াতদন্ত শুরু করে।
সিরাজ আমীন জানান, শনিবার রাতে ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত মুকুলের বড় ভাই মো. সোহেল ও তার বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুল হোসেনকে (৪০) গ্রেফতর করা হয়। পরে তারা মুকুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
তাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানিয়েছেন- মুকুল মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা ছিলেন। তিনি প্রবাসে থাকার সময় পাঠানো টাকা মাদকের পেছনে নষ্ট করেছেন। তার স্ত্রীকে মুকুল প্রায়ই অনৈতিক প্রস্তাব দিত। দেশে ফেরার আসার পর তিনি মুকুলকে অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু কথা শুনেনি। উপরন্তু তার যৌন হয়রানির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের কারণেই তিনি মুকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার পরিচিত বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুল হোসেনকে ১৬ হাজার টাকায় এ পরিকল্পনায় যুক্ত করেন।
সোহেলের বরাতে তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি রাতে মুকুলকে মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ডেকে আনা হয়। পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুল হোসেন তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে নিয়ে যান। একপর্যায়ে মুকুলের গলার মাফলার চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এ সময় সোহেলও এতে অংশ নেন। এর আগে হামিদপুর বাজার থেকে কিনে আনা কোদাল দিয়ে বগা বিলের কাদামাটি খুঁড়ে তাকে পুঁতে রাখা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ও পিবিআই কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।