Logo
Logo
×

সারাদেশ

দই বেচে বই কেনেন একুশে পদক পাওয়া জিয়াউল হক

Icon

মনোয়ার হোসেন জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

দই বেচে বই কেনেন একুশে পদক পাওয়া জিয়াউল হক

ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা বটতলা গ্রামের জিয়াউল হক ফেরি করে দই বিক্রির কষ্টার্জিত অর্থে নিজ বাড়িতে পাঠাগার স্থাপন করেছেন। শুধু পাঠাগার স্থাপন নয়, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইও তিনি কিনে দেন।

কোনোমতে সংসার চালানোর পর সঞ্চিত অর্থে তিনি মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নানা ধরনের বই কেনেন এবং উপহার দেন। এ শিক্ষানুরাগী সাদামনের মানুষ জিয়াউল হক এবার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

৬৭ বছর ধরে দই বিক্রির টাকায় জিয়াউল হকের স্থাপিত পাঠাগারে গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বইয়ের পাশাপাশি ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই স্থান পেয়েছে। বিনা মূল্যে তার পাঠাগার থেকে পাঠ্য বইয়ের সুবিধা পায় এলাকার গরিব পরিবারের সন্তানরা। পাঠাগারে স্থান পেয়েছে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির পাঠ্যবই। মাধ্যমিক স্তরের গরিব শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইও কিনে দেন।

মুসরিভূজা বটতলা গ্রামে নিজ বাড়িতে জিয়াউল হক শৈশবের কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৫৫ সালে তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও তিনি পারেননি। তখন বই কিনতে এক টাকা দুই আনা লাগত। গোয়ালা বাবা তৈয়ব আলী মোল্লার কাছে বই কেনার আবদার জানালে তিনি বলেন, এ টাকায় বই কিনলে ২-৩ দিন পুরো পরিবারকে অনাহারে থাকতে হবে। সুতরাং বই কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। পড়াশোনা ছেড়ে দই বিক্রির কাজে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দেন বাবা। পরের বছর বাবা মারা গেলে তিনি বাবার ব্যবসার হাল ধরেন।

১৯৫৭ সালে জিয়াউল হক এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে তোলেন পাঠাগার। নাম দেন জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার। এখন বয়সের ভারে তিনি আর ফেরি করে দই বিক্রি করতে পারেন না। তবে রহনপুর রেলস্টেশন বাজারে নিজ হাতে তৈরি দই বিক্রি করেন।

তিনি জানান, সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে তিনি শিক্ষা উপকরণ দিয়েছেন।

জিয়াউল হক জানান, সবই চলছে তার দই বিক্রির টাকায়। ৭২ জনের চোখের ছানি অপারেশনে তিনি আর্থিক সহায়তা করেছেন। গৃহহীন ১৭টি পরিবারকে বাড়িঘর করে দিয়েছেন। আর খরাকবলিত এলাকায় ১৭টি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন। তবে টিউবওয়েলগুলো নিজের অর্থায়নে নয় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থে করে দিয়েছেন। সমাজ সেবায় অবদান রাখায় এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম