Logo
Logo
×

সারাদেশ

চোখের সামনে স্বামী-সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় উর্মি

Icon

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম (নাটোর) 

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম

চোখের সামনে স্বামী-সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় উর্মি

আমি যদি দু-তিন ধাপ এগিয়ে না যেতাম তাহলে তো আমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর কাছে চলে যেতে পারতাম। আমি কেন স্বামীর কথা শুনে আগে বাসের দিকে এলাম। আমি শুধু একটা শব্দ শুনতে পেলাম। পেছন ফিরে দেখি, আমার স্বামী-সন্তান যেন উড়ছে। ১৫-২০ হাত দূরে গিয়ে তারা যখন আছড়ে পড়েছে, তখন তাদের হাত-পা, মাথা ছিন্নভিন্ন। আমি ছুটে ছুটে স্বামীর মাথা, সন্তানের হাত-পা কুড়িয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব? ওদের ছেড়ে আমার বেঁচে কী লাভ!- স্বামী ও একমাত্র সন্তানের লাশের পাশে বসে বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের জোনাইল গ্রামের গৃহবধূ উর্মি খাতুন (২৪)। তিনি ট্রেনের ধাক্কায় নিহত পোশাককর্মী রতন হোসেনের স্ত্রী।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আনালিয়াবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনায় উর্মির স্বামী জোনাইল গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে রতন হোসেন (২৬), তাদের একমাত্র সন্তান রোহান ওরফে সানি (৪) ও বাসের অপর যাত্রী শরিফ মন্ডল (৪০) মারা যান। শরিফ মন্ডল রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্রা গ্রামের আলম মন্ডলের ছেলে।

উর্মি খাতুন শনিবার কাঁদতে কাঁদতে জানান, বাস বিকল হওয়ায় ছেলে সানিকে নিয়ে তারা দুজন নিচে নেমে আসেন। এ সময় রেললাইনের উপরে বসে বাবা ও ছেলে জিলাপি খাচ্ছিল। আর তিনি ও অন্য যাত্রীরা কেউ রেললাইনে বসে বা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরই মধ্যে মেরামত হয়ে গেলে বাসে ওঠার জন্য উর্মি হাঁটা শুরু করেন। আর রতন ছেলেকে কোলে তুলে নিচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন এসে পড়ে। এরই মধ্যে উর্মি রেললাইন পার হতে পারলেও স্বামী ও সন্তান ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান।

জোনাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি খাটিয়ায় কাফনের কাপড়ে ঢেকে বাবা-ছেলের লাশ শোয়ানো আছে। পুরো বাড়ি ও পাশের রাস্তায় অজস্র লোকের ভিড়। ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ায় কাউকেই বাবা-ছেলের লাশ দেখানো হয়নি। পাশেই বসে বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন উর্মি, রতনের বাবা-মা ও একমাত্র যমজ ভাই মানিক প্রামাণিক। স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু উলটো উর্মির বুকফাটা কান্নায় কাঁদছেন তারাও। নিহতের স্বজনরা তো বটেই এমনকি তথ্য সংগ্রহে আসা সংবাদকর্মীরাও অঝোরে কেঁদেছেন। এ সময় আর্তনাদ করতে করতে উর্মি সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সরকার কেন বাস ও রেললাইনের মাঝে বেড়া বা কোনো ব্যারিকেড দেয় না। তাহলে তো আজ আমি স্বামী-সন্তানহারা হতাম না। তিনি বলছিলেন, বাসে আমার স্বামী-সন্তানের কাপড়চোপড়, খেলনা আছে। আপনারা ওগুলো এনে দেন। আমি সেসব স্মৃতি বুকে আঁকড়ে ধরেই বাকি জীবন বেঁচে থাকব।

রতনের চাচাতো ভাই মিনারুল ইসলাম বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষ করে রতন এলাকায় রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে পোশাক কারখানায় চাকরি হলে ঢাকায় যান। কয়েকদিন আগে আরেকটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি হলে তিনি ছুটিতে বাড়িতে আসেন। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ঢাকায় ফেরার জন্য বড়াইগ্রাম থানা মোড় থেকে তারা বাসে ঢাকায় রওনা হয়েছিলেন।

রতনের অপর চাচাতো ভাই মাহিন জানান, ভোর চারটার দিকে লাশ নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরেছি। ঘটনাস্থলে রেললাইনে একটি বাঁক থাকায় ট্রেনটি দেখা যায়নি। এজন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে। 
জোনাইল ডিগ্রি কলেজ মাঠে শনিবার বেলা ১১টায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি বাবা-ছেলের লাশ দাফন করা হয়েছে।

এদিকে কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া টাঙ্গাইল ঘারিন্দা রেলওয়ে পুলিশের এসআই আলী আকবর জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে ওই রাতেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম