সন্তানদের বিষ খাওয়ানোর পর নিজে খেলেন মা, একজনের মৃত্যু
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম
শাশুড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেয়ে তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে অতঃপর নিজেও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক মা। চিকিৎসাধীন মা ও দুই মেয়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তার দেড় বছরের ছোট মেয়ে মীম।
মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে মা ও তিন মেয়েকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। ওই দিন বিকালে প্রথমে তাদের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দ্রুত তাদের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। বর্তমানে মা পলি বেগম (৩২), বড় মেয়ে আফসানা (৮) ও মেজো মেয়ে তিন বছরের আমেনার চিকিৎসা চলছে। এর আগেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোট মেয়ে মীম।
পলি বেগম গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলার লঙ্কারচর গ্রামের টিটো মোল্লার স্ত্রী।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা পলি বেগম আড়ষ্টকণ্ঠে বলেন, তার স্বামী টিটো মোল্লা ঢাকায় চাকরি করেন। তিনি তার তিন মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। আমার বাবার একাধিক বিয়ে থাকায় আমার শাশুড়ি প্রায়ই আমাকে খুটা দিতেন এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। বিয়ের পর থেকেই আমার ওপর নির্যাতন চলে আসছে। আমার স্বামীকে বিভিন্ন সময় বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু তিনি নিতান্ত একজন নিরীহ মানুষ। তিনি তার মাকে কোনোভাবেই বুঝাতে পারছিলেন না।
তিনি বলেন, নির্যাতনের মাত্রা সহ্যের বাইরে চলে গেলে আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেই। আগেই বাড়িতে বিষ এনে রাখি। আমি মরে গেলে আমার সন্তানরা সবার অযত্ন আর অবহেলায় বেঁচে থাকবে। তাদের কষ্টের সীমা থাকবে না। সে কারণে আমার সঙ্গে তাদেরও নিয়ে যেতে চাই। দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবার জন্য মঙ্গলবার বিকালে আমি আমার তিন সন্তানকে আগে বিষ খাইয়ে পরে নিজেও খাই।
পলি বেগমের স্বামী টিটো মোল্লার সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। এ সময় হাসপাতাল বেডে তিনি তার মেজো মেয়ে আমেনাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। আমেনার মুখে অক্সিজেনের মাক্স লাগানো।
নির্যাতনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তার মা প্রায়ই তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। মঙ্গলবার সকালে তার স্ত্রী তাকে আবারো নির্যাতনের কথা ফোনে জানান। স্ত্রীর সঙ্গে কথা হওয়ার পর ওই দিন দুপুরে আমি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হই। পথিমধ্যে এসে জানতে পারি আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ খেয়েছেন। বিষের যন্ত্রণায় কাতরানোর শব্দ ও চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আমার স্ত্রী ও মেয়েদের হাসপাতালে নিয়ে যান। ইতোমধ্যে ছোট মেয়েটা মারা গেছে। অন্য দুই মেয়ের অবস্থাও ভালো না। আল্লাহ জানে তাদের ভাগ্যে কী আছে। আল্লাহ যেন আমার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে সুস্থ করে দেন।
গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাবিকুন নাহান বলেন, মঙ্গলবার রাতে মা ও তিন মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ছোট মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। মা ও অপর দুই মেয়ের চিকিৎসা চলছে। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম না করলে তারা আশঙ্কামুক্ত কিনা নিশ্চিত করা বলা যাবে না।