Logo
Logo
×

সারাদেশ

সিন্ডিকেটের কারণে লাগামহীন মাছ বাজার

Icon

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:০২ পিএম

সিন্ডিকেটের কারণে লাগামহীন মাছ বাজার

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীতীরবর্তী এলাকায় বিভিন্ন বাজারের আড়তদারি সিন্ডিকেট মাছের দাম আকাশচুম্বি করে রেখেছে। দীর্ঘকাল ধরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপজেলায় আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে সব প্রজাতির মাছ প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হলেও কারও মাথাব্যথা নেই। ফলে পদ্মাপাড়ের বসতি হয়েও উপজেলার লাখো জনগোষ্ঠী চড়ামূল্যের কারণে মাছ কিনতে পারছেন না। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর অপর পাড়ে চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর মঈনট ঘাটের পাশে রয়েছে উপজেলায় ভোররাতের সবচেয়ে বড় মাছ বাজার। ওই ভোররাতের মাছ বাজারে রয়েছে অন্তত ৩০টি আড়তদারি ব্যবসা। এ ছাড়া উপজেলা সদর বাজারে তিনটি মাছের আড়ত, চরহাজীগঞ্জ বাজারে তিনটি, জাকেরের সুরা নামক বাজারে চারটি, আরজখার ডাঙ্গি গ্রামের বাজারে তিনটি, আবদুল হাই খান হাটে চারটি, মাসুদখাঁর হাটে তিনটি ও নতুন ডাঙ্গি বাজারে রয়েছে আরও দুটিসহ প্রায় অর্ধশত আড়তদারি ব্যবসা।

সূত্র জানায়, প্রতিটি আড়তের অধীনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেকে আনা হয়েছে প্রয়োজনসংখ্যক জেলে। এসব জেলেকে লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে আড়তদাররা তৈরি করে দিচ্ছেন বিশাল আকৃতির বেড় জাল, কারেন্ট জাল ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। প্রতিটি আড়তের নির্দিষ্ট জেলেরা দিনরাত ৫-৭টি করে ট্রলার, কারেন্ট জাল ও বেড়জাল দিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করে ভোররাতে নিয়ে যায় নিজস্ব আড়তে। সেখানে আকাশচুম্বি দরে বিক্রীত মাছের ৪০ শতভাগ অর্থ নেয় আড়ত মালিক এবং ৬০ শতভাগ অর্থ পায় জেলেগোষ্ঠী। উপজেলার প্রতিটি মাছ বাজারের নিয়ন্ত্রণ করছে আড়তদাররা। তারা বেশি লাভবান হওয়ার জন্য সিন্ডিকেট করে চড়ামূল্যে মাছ বিক্রি করে চলেছেন। আর অতিরিক্ত দামের কারণে উপজেলার লাখো জনগোষ্ঠী সন্তানসন্ততির মুখে তুলে দিতে পারছেন না একবেলা মাছভাত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি মাছ বাজারের আড়তদাররা এলাকার প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ছাত্রছায়ায় থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন আড়তদারি ব্যবসা। তারা প্রতিদিন জেলেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিক্রীত মাছের লাখ লাখ টাকা। মাছ বাজারের আড়তদারদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা, বাজার মনিটর কমিটির সভায় বারবার উপস্থাপন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। 

এ ব্যাপারে সোমবার উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসলে আড়তদারি ব্যবসার ওপর হস্তক্ষেপ করা আমাদের কোনো নীতিমালায় নেই। তবে অতিরিক্ত মূল্যে মাছ বিক্রি ও পদ্মায় অবৈধ জাল ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করতে পারি। 

একই দিন উপজেলার চর মঈনট ঘাটের এক আড়তদার মোরাদ হোসেন মৃধা বলেন, অত্র চরাঞ্চলে মাছের আড়তদারি ব্যবসা করতে লাইসেন্সের দরকার হয় না, তবে মাছ বাজারে নির্দিষ্ট ঘর ও লাখ লাখ টাকা খরচ করে জেলেদের নৌকা জাল দিতে হয় এবং পদ্মায় জেলেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাদের দেখতে হয়। 

আর চিত্ত হালদার (৭০) নামক এক জেলে বলেন, বাপুরে এই বয়সে পেটের দায়ে সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে এসে আমরা সাতজন জেলে বেড়জাল দিয়ে পদ্মায় মাছ ধরি। এই শীতে রাতভর খেটে বিক্রীত মাছের যে ৬০ শতভাগ টাকা পাই তা দিয়ে আমগো খুরাকই হয় না। আড়তদারদের ৪০ ভাগ অর্থ দেওয়া ছাড়াও বাজারে আসার পর খাজনার মাছ ও ঝাড়দারের মাছ রাখার পর অবশিষ্ট মাছ ডাকের মাধ্যমে বিক্রি হয় বলেও সে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম