Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভুয়া ট্রেডমার্কে বিক্রি হচ্ছে হাজারী গুড়

Icon

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০১ পিএম

ভুয়া ট্রেডমার্কে বিক্রি হচ্ছে হাজারী গুড়

মানিকগঞ্জের ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে এ গুড়ের সুখ্যাতি। সেই সুনাম আর ঐতিহ্যকে পুঁজি করে ভুয়া ট্রেডমার্কে বিক্রি হচ্ছে এ গুড়। অভিযোগ উঠেছে, হাজারী পরিবারের উত্তরসূরি হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম হাজারী ওরফে শামীম হাজারী গাছিদের (যারা গুড় প্রস্তুত করেন) জিম্মি করে অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, হাজারী গুড় তৈরির গাছিদের নিয়ে হাজারী পল্লি তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজারী গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন করে ৫ লাখ খেজুরগাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রেডমার্কের বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব। আমরা নিজস্বভাবে অনুমোদন নেব। সরকারিভাবেই এ গুড়ের ট্রেডমার্ক হবে।

জানা যায়, ভুয়া ট্রেডমার্ক বসিয়ে এভারগ্রিন বিডি সেফ ফুডস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান হাজারী গুড় বাজারজাত করছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মেহেদী জামান ফুয়াদ বলেন, শামীম হাজারী তার ‘হাজারী প্রতিষ্ঠানের নামে’ ট্রেডমার্ক নিবন্ধন রয়েছে বলে আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সমঝোতা করেছেন। তিনি গুড় সরবরাহ করেন। প্যাকেট, কার্টন আর টিসু পেপার আমরা সরবরাহ করি। তবে হাজারী গুড়ের নিবন্ধন নম্বরটি যে সঠিক নয়, এটা আমার জানা ছিল না।

পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হাজারী গুড় নামে কোনো ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধিত হয়নি। ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর মো. শফিকুল ইসলাম হাজারী ‘হাজারী প্রোডাক্টস’ নামে ট্রেডমার্কের ৩০ নম্বর শ্রেণি কোঠায় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। এ শ্রেণিতে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে হাজারী গুড়ও রয়েছে। তার আবেদন নম্বর ছিল ২২৮৮৪৮। কিন্তু অন্য আরেকটি আবেদনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ থাকায় অধিদপ্তর ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তার আবেদনটি বাতিল করে দেয়।

ট্রেডমার্ক বিভাগের উপপরিচালক (ট্রেড মার্কস) মেহেদী হাসান বলেন, চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি আবেদন বাতিলের বিষয়টি জানিয়ে তাকে (শামীম হাজারী) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবেদনের সিরিয়ালকে তিনি নিবন্ধন নম্বর হিসাবে ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন।

জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা শিকদারপাড়া (গাছিপাড়া) এলাকায় এই গুড়ের উৎপত্তি। উৎপাদকের নামানুসারে হাজারী নামে পরিচিতি পায় এ গুড়। এর উৎপত্তি নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে, ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও এ গুড় খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। সেই থেকে গোটা ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে এই হাজারী গুড় ব্যাপক হারে সমাদৃত।

হাজারী পরিবারে এ গুড়ের উৎপত্তি হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারের কেউ গুড় তৈরি করেন না। উৎপাদকের কাছ থেকে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া অনেকেই (বিশেষ করে গাছিরা) শেখেন। পরে তারাই গুড় তৈরি ও বিক্রি করে আসছেন। অনেকে হাজারী পরিবারের কাছ থেকে সিলমোহরও নেন। কিন্তু প্রায় চার বছর ধরে গাছিদের জিম্মি করে ভুয়া ট্রেডমার্কে প্রতারণা করে আসছেন শামীম হাজারী।

গাছিরা জানান, বহু বছর ধরে তারা নিজেরা গুড় তৈরি ও বিক্রি করে আসছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে শামীম হাজারী ট্রেডমার্কের কথা বলে গুড় তৈরি ও বিক্রি করতে বাধা দেন। তারা জানান, এখন যারা তৈরি করেন, তাদের প্রত্যেকে প্রায় চারভাগের তিনভাগ গুড় শামীম হাজারী ও তার ভাইদের দিতে হয়। বাকি একভাগ বাইরে বিক্রি করতে পারেন তারা। বাইরে ১৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলেও শামীম হাজারী দেন ১১০০-১২০০ টাকা।

এ ব্যাপারে শফিকুল ইসলাম হাজারী ওরফে শামীম হাজারী বলেন, আমার ট্রেডমার্ক আবেদন বাতিল হয়েছে বলে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। যদি বাতিল হয়ে থাকে, তাহলে আবার আবেদন করব। 

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুনিম হাসান বলেন, হাজারী গুড় বিপণনে যে নিবন্ধন নম্বরটি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন নম্বর নয়। তিনি (শামীম হাজারী) কোনো নিবন্ধন পাননি। তার আবেদন বাতিল হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম