Logo
Logo
×

সারাদেশ

অতি মুনাফার লোভে হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন রাজশাহীর মানুষ

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম

অতি মুনাফার লোভে হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন রাজশাহীর মানুষ

অতি মুনাফার লোভে অনলাইন অ্যাপসে বিনিয়োগ করে রাজশাহীর লক্ষাধিক মানুষ গত কয়েক বছরে হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন। প্রতারক চক্র বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিদেশি অ্যাপসের নামে শুধুমাত্র রাজশাহী অঞ্চল থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন।

এসব অ্যাপস পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত অনলাইন প্রতারণার অভিযোগে ২৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। সেসব মামলার আসামিরা টাকা লুটে নিয়ে কেউ দুবাই কেউবা মালয়েশিয়ার মতো দেশে গিয়ে আয়েসি জীবন কাটাচ্ছেন।

পুলিশ এসব প্রতারক চক্রের মূলহোতাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। এরই মধ্যে গত ১৮ জানুয়ারি আরএমপির রাজপাড়া থানায় অনলাইন প্রতারণার নতুন আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।

ভুক্তভোগী মোস্তাক হোসেনের দায়ের করা মামলার অভিযোগ মতে ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামের একটি অ্যাপসে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর কয়েকশ মানুষ।

প্রাথমিক হিসাব মতে, চক্রটি শুধুমাত্র রাজশাহী অঞ্চল থেকেই প্রায় তিনশ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। জানা গেছে, ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে নিম্নে ১ লাখ থেকে ঊর্ধ্বে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন অনেকেই। অ্যাপসটি বন্ধের পর তারা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপসটি চালু হয়। রাজশাহীতে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগ করে প্রথমদিকে গ্রাহকদের বোঝানো হয়, এই অ্যাপসে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। বিদেশ থেকে যেভাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আসে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঠিক তেমনিভাবে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা হবে। শুরুর দিকে কয়েকজন বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে কিছু ডলার জমা হয়। তাদের দেখাদেখি অনেকেই ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে অনলাইন বিনিয়োগে ঝুঁকে পড়েন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগে আরও জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি চালু হয় ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের পরে আর কাউকে মুনাফা দেওয়া হয়নি। ব্যাংকের সমস্যার কারণে মুনাফা ঢুকছে না বলে কাউকে কাউকে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে হাতে-হাতে নগদ কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। অ্যাপসটি চালু রেখেই প্রতারক চক্র আরও বিনিয়োগ নিতে থাকে। যদিও অনেক গ্রাহক গত এক বছর ধরে কোনো মুনাফা পাচ্ছিলেন না।

সর্বশেষ গত নভেম্বরের শেষদিকে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অনলাইন থেকে উধাও হয়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় যেসব এজেন্টের মাধ্যমে অনলাইনে বিনিয়োগ করেছিলেন সেইসব এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অ্যাপস বন্ধের পরপরই এজেন্টরা লাপাত্তা হয়ে যান। অবশেষে রাজশাহীর মোস্তাক হোসেন গত ১৮ জানুয়ারি মামলা করেন।

মোস্তাক হোসেন আরও বলেন, অনেক পরে তারা বুঝতে পারেন, অ্যাপসটির নামের আগে ইউএস থাকলেও সেটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালনা করা হচ্ছিল না। অ্যাপসটির সার্ভার পরিচালনা করা হয় সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে। যখন বুঝতে পারেন তখন আর কিছু করার ছিল না কারো।

মামলা দায়েরের পর ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে প্রতারিত ৫৮ জনের তালিকা পেয়েছেন মোস্তাক হোসেন। সেগুলো পুলিশকে দিয়েছেন।

মোস্তাক হোসেন জানান, ঢাকার সাভারের একজন ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। অ্যাপস বন্ধ দেখে তিনিও সাভার থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তাকে ফোনে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।

মোস্তাক হোসেনের অভিযোগে আরও জানা গেছে, তিনি ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান নগরীর নওদাপাড়ার ওয়াহেদুজ্জামানের (৩৮) মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছিলেন। ওয়াহেদ ২০২২ সালে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের সঙ্গে জড়িত হন।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করিম হারিয়েছেন ৯ লাখ টাকা। রেজাউল করিম বলেন, রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার তাজুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি এই অ্যাপসে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি অনলাইন বিনিয়োগের জন্য কিছু টাকা ঋণও করেছিলেন। তিনি মাত্র তিন মাস কিছু মুনাফা পেয়েছিলেন। পুরোটাই এখন শেষ।

এদিকে রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে। তিনি বলেন, ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার কথা শুনে তিনি তার জমানো ২৫ লাখ টাকা  ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রথম কয়েক মাস কিছু মুনাফা পেয়েছিলেন। গত এক বছর আর কিছু পাননি। রাজশাহীর এজেন্টরা তাকে বুঝিয়েছিলেন কিছু সমস্যার কারণে মুনাফা আসছে না। পরে আসবে। এখন অ্যাপস পুরোটাই বন্ধ।

এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি আরএমপির রাজপাড়া থানায় মোস্তাক হোসেন বাদী হয়ে অনলাইন প্রতারণার যে মামলা করেছেন তাতে আসামি করা হয়েছে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়াহেদুজ্জামান (৩৮), তার স্ত্রী ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজজহুরা (৩২), কান্ট্রি লিডার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার মোতালেব হোসেন ভূঁইয়া (৩৫), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারুক হোসাইন (৩৯) ও রাজশাহী জেলা এজেন্ট নগরের বোয়ালিয়াপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডলকে (৩৬)।

থানায় মামলা দায়েরের পর আসামিরা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক জানিয়েছেন। তবে তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। দেশে থাকলে তাদের গ্রেফতার হতে হবে বলে জানান তিনি।
 
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা ও ক্রিপ্টো কারেন্সিতে বিনিয়োগ ও লেনদেন নিষিদ্ধ হলেও এর আগে এমটিএফই, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ, ই-মুভি প্ল্যানসহ কয়েকটি অ্যাপস রাজশাহী অঞ্চলের লক্ষাধিক গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছে। এসব অভিযোগে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় মামলা হলেও মূলহোতারা কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম