Logo
Logo
×

সারাদেশ

হাড়কাঁপানো শীতেও রাজশাহীতে স্কুল খোলা, ছুটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় কর্মকর্তারা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪ পিএম

হাড়কাঁপানো শীতেও রাজশাহীতে স্কুল খোলা, ছুটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় কর্মকর্তারা

মাঘের হাড়কাঁপানো শীতে রাজশাহীতে ১০ দিন ধরে দিনের তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। তীব্র ঠান্ডায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জীবনযাত্রা মারাÍকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণত কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। উত্তর থেকে হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে নগরী ও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে স্কুল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো রাজশাহীতে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, তাপমাত্রা কোনো দিন কমে যাচ্ছে, আবার কোনো দিন বাড়ছে। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় আছি। কী করব বুঝতে পারছি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও স্কুল ছুটির স্পষ্ট নির্দেশনা আমাদের দেয়নি। তীব্র শীতে স্কুল খোলা থাকায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তারা বলছেন, তীব্র ঠান্ডায় স্কুলে যাতায়াতের কারণে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে রাজশাহী অবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীতে শনিবার সকালে সর্বনিু তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী এক সপ্তাহে রাজশাহীতে দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে কেন্দ্রীয়ভাবে পূর্বাভাস দিয়েছে আওহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে নগরীর ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশ কম। এই স্কুলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ১৭ জন। এ ছাড়া একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৮০ জন হলেও ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ২৬ জন। নামো ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা। এই স্কুলটিতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। স্কুলটির প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৩৯ জন। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল ২৩ জন।

ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা সাবানা বলেন, শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। কয়েক দিন আগে প্রথম শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে এসে বমি করে। পরে তাদের ছুটি দেওয়া হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২৩ শিশু হাসপাতালের ১০ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এই দুই ওয়ার্ডে শিশু রোগী ভর্তি আছে ৫৫১ জন। গত কয়েক দিনে তারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কোনো কোনো বেডে দুজনকে রাখা হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর বেশির ভাগ শিশু জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণেই শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সোহেল আজম নামে নগরীর এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,  রাজশাহীতে ১০ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। তাপামাত্রা ১০-এর নিচে থাকছে। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডায় স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কিন্তু স্কুল ছুটি নিয়ে কর্মকর্তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোকাররমের বাবা মমিন বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা। সকাল বেলা আসতে অনেক কষ্ট হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন স্কুল ছুটি দেওয়াই উচিত। 
রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের জেলাতে স্কুল বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা গত সপ্তাহে আবহাওয়া অফিস থেকে তথ্য নিয়েছি। তখন পর্যন্ত স্কুল বন্ধের মতো কিছু পাওয়া যায়নি। আবারও তথ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম