Logo
Logo
×

সারাদেশ

টর্চারসেলে নির্যাতন চালিয়ে বন্ধুকে হত্যা, ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন রাব্বি

Icon

আবু জাফর, কেরানীগঞ্জ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম

টর্চারসেলে নির্যাতন চালিয়ে বন্ধুকে হত্যা, ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন রাব্বি

কেরানীগঞ্জে বন্ধু রাসেলকে টর্চারসেলে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আফতাব উদ্দিন রাব্বি (দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক) ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তার আগেই ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকা থেকে মঙ্গলবার ৪ সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

বুধবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আমীনুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম।

টর্চারসেলে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে রাসেল হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

একটি ভিডিও ফুটেছে দেখা যায়- রাসেলের পরনে কোনো জামা নাই। মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। খালি গায়ে থাকা রাসেলকে কয়েকজন টানাহেঁচড়া করছে। মারের চোটে আধমরা অবস্থায় রাসেল রাব্বিকে বলছে- 'আব্বা আব্বা, রাব্বি আব্বা আমাকে বাঁচান।'

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে রাসেলকে। একজন তাকে গালিগালাজ করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়- মেঝেতে নিথর দেহ রাসেলের। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। কেউ একজন সেটা মুছে দিচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ঝিনাইদহ থেকে ৫ জন ও ভোলার লালমোহন থেকে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আফতাব উদ্দিন রাব্বি (৩০), সজীব (৩৬), রাজীব (৩৫), হীরা (৩০), ফিরোজ (৩১), আলমগীর ওরফে ঠান্ডু (৩৯), আমির (৩৮), রনি (৩৫), দেলোয়ার দেলু (৩৭), শিপন (৩১), মাহফুজ (৩৬) ও মো. রতন শেখ (২৮)।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যায়, নিহত রাসেল ১ নম্বর আসামি রাব্বির বন্ধু ছিল। কালিগঞ্জ এলাকায় রাসেল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে রাব্বির নামে চাঁদা তুলতেন; কিন্তু রাসেল সেই টাকা রাব্বি ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। মূলত আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ও পারস্পারিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং রাসেলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাসেলকে মারার জন্য রাব্বি লোকজন দিয়ে রাসেলকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে আসে। অফিস রুমে রাব্বি ও তার সহযোগীরা মিলে সারারাত রাসেলকে প্রচণ্ড মারধর করে ও কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাসেল তার বন্ধু রাব্বিকে 'আব্বা আব্বা' বলে ডাকে ও বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে; কিন্তু তারপরও সবাই মিলে তাকে পালাক্রমে মারতে থাকায় রাসেল গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

একপর্যায়ে রাব্বির লোকজন আহত রাসেলকে অচেতন অবস্থায় রাত ২টার দিকে তার বাসায় স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসে। পরদিন সকালে রাসেলকে চিকিৎসার জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাসেল মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন রাব্বির বাবা শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাছের উদ্দিন। তিনি লোকজন নিয়ে লাশ দাফনের উদ্যোগ নেন। কবর পর্যন্ত খোঁড়েন; কিন্তু পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি হয়। মামলা করেন নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার। মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে পুলিশ ১২ আসামিকে গ্রেফতার করেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম