যেখানে চলে জামাইদের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

আব্দুল গাফফার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম

গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রতি বছরের মতো এ বছরও উপজেলার বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামের জামাইদের পৌষ সংক্রান্ত মিলনমেলা হয়েছে। মূলত এটা পৌষ সংক্রান্ত জামাই মিলনমেলা, কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। এ মেলায় চলে জামাইদের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা।
তিন দিন আগে থেকেই মেলার মাঠে জমতে থাকে নানা আয়োজন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে চলে নানারকম আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসীসহ বিভিন্ন জেলার লোকজন।
উপজেলার বিনিরাইল, কাপাইস, জাংগালীয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর, জামালপুরের আশপাশের গ্রামসহ যারা এসব এলাকায় বিয়ে করেছেন, সেই সব জামাইরা হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। মেলায় উপজেলাবাসী ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ শুধু এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে আসেন। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
তাছাড়া এ মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতা হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বেশি দামে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন।
এ মেলায় যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন দেশি-বিদেশি মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছ দেখার জন্য।
এবারের মেলায় প্রায় ৯ শতাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছসহ আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরা সাজিয়েছেন। এ মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কৈ, কুড়াল, কালীবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়ে থাকে নানা রকমের দেশি মাছও। মেলায় জামাইরা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন।
পৌষ মেলার আয়োজকরা জানান, এ মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫৫ বছর যাবত মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
তারা জানান, মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
তারা আরও জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে এটা সব ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যের উৎসবে পরিণত হয়েছে।