Logo
Logo
×

সারাদেশ

যেসব কারণে মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়লেন শাহরিয়ার আলম

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম

যেসব কারণে মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়লেন শাহরিয়ার আলম

দ্বাদশ সংসদের নতুন মন্ত্রিসভায় রাজশাহীর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে যেমন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে; তেমনি গত দুবারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের ছিটকে পড়ার বিষয়টিও নানান আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬ আসন থেকে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর তার নির্বাচনি এলাকা চারঘাট-বাঘার নেতাকর্মীদের একাংশ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে থাকেন— এবার নতুন সরকারে শাহরিয়ার আলম পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে মূল্য দেবে দল।  

১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিসভার তালিকা সামনে আসতেই শাহরিয়ারের অনুসারীরা অবাক হন। কারণ নতুন মন্ত্রিসভার তালিকার নাম নেই শাহরিয়ারের।এরপর থেকেই তার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্তি  না হওয়া নিয়ে সুলোক সন্ধান শুরু হয়।রাজশাহীর রাজনীতিতে শাহরিয়ারের বিরোধী পক্ষ বলেছে, গ্রুপিংয়ের কারণে বাদ পড়েছেন তিনি। অন্যদিকে শাহরিয়ার অনুসারীরা আশাবাদী তিনি ভবিষ্যতে আবারও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহরিয়ার আলম রাজশাহী কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজ হয়ে শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। একটি বিদেশি মালিকানাধীন পোশাক কারখানার কর্মকর্তা হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন। পরে ব্যবসায় সফলতা পেয়ে তিনি নিজেই কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক হন। 

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজশাহী-৬ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেন। ২০১৮ সালেও একই পোর্টফোলিও ধরে রাখতে সক্ষম হন। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে শাহরিয়ার আলমের। রাজশাহীর রাজনীতিতে তাকে ঘিরে গ্রুপিং তৈরি হয়।    

তার নির্বাচনি এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শাহরিয়ার দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে চলেছেন। তবে ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর চারঘাট ও বাঘায় তৈরি করেন নিজস্ব বলয়। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পদপদবি থেকে বাদ পড়েন। বিপরীতে সুযোগ সন্ধানীরা বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে স্থান পেয়ে যান। শাহরিয়ার আলম এগুলো দমন করতে পারেননি। পুরোনো ও সুযোগ সন্ধানী নেতাদের বিরোধ তুঙ্গে উঠে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এমন সব নেতারা ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন পান, যাদের ভাবমূর্তি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে তাদের অধিকাংশই পরাজিত হন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দখল করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের পদগুলো। যে কারণে তারা (বিদ্রোহী) শাহরিয়ার আলমের বিরোধী হয়ে উঠেন। বাঘার মেয়র আক্কাস আলীর সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে শাহরিয়ার আলমের।

শাহরিয়ার বিরোধীরা বলছেন, শুধু নিজের নির্বাচনি এলাকাতেই নয়, শাহরিয়ার বিভিন্ন সময় রাজশাহী জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন।  জেলা ও মহানগর নেতাদের কারও কারও বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার বলেছেন, চারঘাট-বাঘা চলবে এলাকার মানুষের মতো করে। রাজশাহী নগরীর কোনো গডফাদারের মতো করে নয়। 

রাজশাহী ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শাহরিয়ার সরকারের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তাদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কটুকুও রাখেননি। নগরীতে কোনো সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতেও শাহরিয়ার নিজেকে অনুপস্থিত রাখেন।তবে শাহরিয়ার সমর্থকরা বলছেন, এসব অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়। প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাজে তাকে সময় বেশি দিতে হয়েছে।এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও সব সময় তিনি এলাকায় সময় দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, শাহরিয়ার আলম দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে হাইব্রিড নেতাদের গুরুত্ব দিয়েছেন। এর ফলে তাকে এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হয়নি। 

তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে শাহরিয়ার আলমের ঘনিষ্ঠ অনুসারী চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার আলম এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান না হওয়ায় আমরা দলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছি। তবে আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী হয়তো আগামীতে শাহরিয়ার আলমের মতো একজন চৌকস নেতাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।

এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলমের প্রতিক্রিয়া জানতে শুক্রবার কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়ার পরও তিনি ধরেননি। ফলে এ বিষয়ে সরাসরি তার প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম