Logo
Logo
×

সারাদেশ

হাকালুকি হাওড়: বিষটোপ আর পাতানো ফাঁদে মরছে অতিথি পাখি

Icon

আজিজুল ইসলাম, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৫ পিএম

হাকালুকি হাওড়: বিষটোপ আর পাতানো ফাঁদে মরছে অতিথি পাখি

এক সময়ে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল বলা হতো দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওড়কে। ছিল মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা বিলীন হয়ে গেছে। হাওড়ে আসা অতিথি পাখিরা মরছে বিষটোপ আর শিকারিদের পাতা ফাঁদে।

হাকালুকি হাওড় অবস্থিত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫টি উপজেলা নিয়ে। ১৮১ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার জলাভূমি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই হাওড়ে ছোট-বড় ২৪৩টি বিল। সরকার ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওড়কে পরিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা ঘোষণা করে।

২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে ফিরিয়ে আনে হাওড়ের পরিবেশগত ভারসাম্য। ১২টি মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়। যেগুলোতে মাছ ছাড়াও অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ছিল।

বুধবার মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওড়ের জুড়ীর অংশে নাগুয়া ও চাতলার বিলে সরেজমিন গেলে নাগুয়া বিলের পাশে বিষটোপে মরা ৩২টি হাঁস প্রজাতির পরিযায়ী পাখির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আশপাশে একটি দুটি করে ধুঁকে ধুঁকে মরছে আরও কয়েকটি পাখি। এগুলো বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি পিয়াং হাঁস ও উত্তরে ল্যাঞ্জা হাঁস।

স্থানীয় লোকজন বলেন, শিকারি তারা দল বেঁধে বিষটোপ ও জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে পরিযায়ী পাখি শিকার করছে। তারা সেসব পাখি গোপনে চড়া দামে বিক্রিও করছে। চাতলা বিলের ইজারাদার হাবিবুর রহমান জানান, হাকালুকি হাওড়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আগে অনেক পাখি দেখতাম এবার এসব চোখে পড়ছে না।

পরিচয় গোপন রেখে বড়লেখা উপজেলার আজিমগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ জনের একটি শিকারি দল নিয়মিত পাখি শিকার করে। বাজারে পাইকারি দরে পাখি বিক্রি করে। পরে এগুলো স্থানীয় বাজার ও বসতবাড়িতে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় একজন বলেন, হাকালুকি হাওড়ের পাখির অনেক দাম। ২টি হাঁস পাখি ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।  অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। আপনার লাগলে অর্ডার দিতে পারেন। এখানে অনেকেই শিকার করে। তবে শর্ত হলো কেনার সময় একা আসতে হবে।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খালিদুর রহমান জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা, শিকার, ক্রয়-বিক্রয় ও নিজের দখলে বন্দি করে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু শীত মৌসুমে একটি কুচক্রী মহল পাখি শিকারের মতো নিকৃষ্ট একটি কাজে লিপ্ত।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাকালুকি হাওড়ের প্রতি নজর দিতে হবে-নতুবা বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, এপিডেমিওলজি ও শৌখিন বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহক ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম জানান, হাকালুকি হাওড়ে পাখি দেখতে এবং ছবি তোলার জন্য আমরা ৪ জন সম্প্রতি গিয়েছিলাম নাগুয়া ও চাতলার বিলে। তখন আমরা নিজের চোখে এই নিষ্ঠুর বিষয়গুলো দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। মানুষ মাছ ধরার নামে রাতে বিভিন্ন ধরনের জাল ও বিষটোপ প্রয়োগ করে আর ভোরবেলা এসে বিষটোপ খেয়ে মরা এই পাখিগুলো ধরে জবাই করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। এসব পাখি খেয়ে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। পাশাপাশি পরিযায়ী পাখি রক্ষায় বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিয়মিত প্রশাসনিক  মনিটরিং এবং আন্তরিক সহযোগিতা থাকতে হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিষটোপ দিয়ে পাখি হত্যার বিষয়টি আমি জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অনুসন্ধান করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম