সুদের টাকার জন্য নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
মনোয়ার হোসেন জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম
দাদন ব্যবসার জেরে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
গত ৬ জানুয়ারি শনিবার পৌর এলাকার মহাডাঙ্গার একটি মাঠ থেকে দগ্ধ ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মাঠ থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া মরদেহটি স্বপ্না আক্তার জেসমিন নামে এক নারীর বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
নিহত স্বপ্না আক্তার জেসমিন নওগাঁ জেলার নিয়মতপুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মৃত আজিম উদ্দীনের মেয়ে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌরসভার আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিনের স্ত্রী।
হত্যারহস্য উদঘাটনে নেমে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার চারজন হলেন শরিফুল ইসলাম, পারভীন, আয়েশা বেগম, লেতুন জেরা। তারা একই এলাকার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে তিনি স্বীকার করেছেন সুদের টাকা লেনদেনের জেরে জেসমিনকে হত্যার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে সদর মডেল থানার ওসি মিন্টু রহমান তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় দাদন ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল নিহত স্বপ্ন আখতার জেসমিন। অভিযুক্ত শরিফুল ৪-৫ বছর আগে জেসমিনের কাছ থেকে সুদে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা নেন।
এই সুদের টাকাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন গত ৬ জানুয়ারি শরিফুল সুদের টাকা পরিশোধের কথা বলে মোবাইল ফোনে জেসমিনকে তার বাড়িতে ডাকেন। পরে সন্ধ্যার দিকে মহাঙাঙ্গা গ্রামের ঢাবা মাঠে জেসমিনকে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গিয়ে একপর্যায়ে তাকে পেছন থেকে আঘাত করেন। এ সময় জেসমিন চিৎকার করলে জেমমিনের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ লুকিয়ে ফেলতে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলে।
পরে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে ওই মাঠ থেকে দগ্ধ অবস্থায় স্বপ্না আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৮ জানুয়ারি স্বপ্নার বড় ভাই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাঁসুয়া ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করে এবং পলাতক চারজনকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে নেওয়া হলে ১৬৪ ধারায় শরিফুল ইসলাম হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। ওসি মিন্টু রহমান জানান, মরদেহ যেন না চেনা যায় সেজন্য মরদেহে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘাতকরা।