গণপিটুনিতে নিহত ৩: ক্ষোভের আগুনে পুড়ছিল গ্রামবাসী
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
অব্যাহত গরু মহিষ চুরিতে ক্ষতিগ্রস্ত চলনবিলের মানুষ ক্ষোভের আগুনে পুড়ছিলেন। এজন্যই চলনবিলের ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামবাসীরা গরু চোর সন্দেহে ৩ ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
শুক্রবার দিনগত রাত ২টার দিকে উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামবাসীদের দাবি নিহতরা উপজেলার অষ্টমনিষার জনৈক গোলাপ হোসেনের বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরি করে নৌকায় গুমানী নদী দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
গ্রামবাসীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গরু চোরের দৌরাত্ম্যে চলনবিলের মানুষ অতিষ্ঠ। গত এক বছরে চলনবিল অঞ্চল থেকে ২ শতাধিক গরু মহিষ চুরি করে নিয়ে গেছে গরুচোরেরা। অনেক গ্রামবাসী একমাত্র সম্বল গরু মহিষ চুরি হওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। এজন্য ক্ষোভের আগুনে পুড়ছিল গ্রামবাসীরা। পালাক্রমে রাতে তাদের গরু মহিষ চুরি থেকে রক্ষায় পাহারা দিয়ে আসছিলেন।
সংবাদকর্মী আব্দুর রহিম জানান, গত ৩ দিন আগে অষ্টমনিষার এক ব্যক্তির বাড়িতে চোরেরা চিঠি দেয় এবং হুমকি দেয় যে, ‘তোর বাড়ি থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাব পারলে ঠেকাস’। এই চিঠি পাঠানোর ৩ দিন পর শুক্রবার রাতে পার্শ্ববর্তী গোলাপ হোসেনের বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে বেতুয়ান গ্রামের পাশের গুমানী নদী দিয়ে নৌকাযোগে সন্দেহভাজন ৪ ব্যক্তি ওই গ্রামে প্রবেশ করেন। তারা গোলাপ হোসেনের বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরি করে নিয়ে নৌকায় করে পালাচ্ছিলেন। বিষয়টি বাড়ির লোকজন টের পাওয়ার পর গরু চোরের দলকে ধাওয়া করেন। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশে পাশের বহু লোকজন এসে জড়ো হন।
এরপর গ্রামবাসী অপর একটি নৌকা দিয়ে গরু চোরদের নৌকা আটকিয়ে ফেলেন। এ সময় গরু চোররা তাদের কাছে থাকা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ২ গ্রামবাসী আহত হন। তাদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে গণপিটুনি দেওয়া শুরু করেন। এতে সন্দেহভাজন গরুচোর দলের তিন ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং একজন পালিয়ে যান।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হোসেন জানান, গরু চুরি করে পালানোর সময় ৩ জন নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের লাশ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান।